কারাগারই ভালো ছিল, বললেন স্ত্রীর প্রতারণার শিকার জল্লাদ শাহজাহান
জীবনের প্রায় অধিকাংশ বয়স কেটে গেছে কারাগারের চার দেয়ালে। সেখানের প্রতিটি ইট বালুকণা আমার আপনজন হয়ে গেছে। সেখানে কোনো প্রতারণার শিকার হইনি। কারাগার থেকে বের হয়ে নিজের আত্মীয় স্বজন সবাই হারিয়ে গেছে। নতুন জীবনের আশায় সংসার শুরু করি। কারা জীবনের উপার্জন করা সকল অর্থ হাতিয়ে সে পালিয়ে গেল। যেখানে গেছি সেখানেই প্রতারণার শিকার হচ্ছি। মানুষ চিনতে পারছি না। এক দুনিয়া থেকে আরেক দুনিয়া এসে শুধু প্রতারণার শিকার হলাম। এখন মনে হলো কারাগারই ভাল ছিল।
আজ সোমবার (১ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে নিজের জেল-পরবর্তী জীবনের অভিজ্ঞতা ও নানা প্রতারণার ঘটনা জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জল্লাদ শাহজাহান।
জল্লাদ শাহজাহান বলেন, ২০২৩ সালের ১৮ জুন কারামুক্তির পর আমি ঢাকার কেরাণীগঞ্জের গোলামবাজারে বসবাস শুরু করি। এরপর সেখানে একটি চায়ের দোকান দিয়ে কোনো মতো দিনযাপন করার চেষ্টা করি। একদিন সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কেরাণীগঞ্জের কদমতলী থেকে কোনাখোলায় যাচ্ছিলাম। তখন গাড়ির ভেতরে আমি একটি ভ্যানিটি ব্যাগ খুঁজে পাই। ব্যাগের ভেতরে থাকা কাগজে লেখা ছিল একটি মোবাইলফোন নম্বর। সেই নম্বরে ফোন করে আমি ভ্যানিটি ব্যাগের মালিককে ব্যাগ নিয়ে যেতে বলি। পরে ব্যাগের মালিক ২৩ বছর বয়সী সাথী আক্তার ফাতেমা নামের একটি মেয়ে তার বান্ধবীকে নিয়ে কেরাণীগঞ্জের গোলামবাজারে হাজির হয়। এরপর মেয়েটির মা শাহিনূর বেগমের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। মোবাইলফোনে পরিচয়ের পর মেয়েটির সঙ্গে আমি বেশ কয়েকবার কথা বলি। একপর্যায়ে মেয়েটি ও তার মা জুরাইন থেকে কেরাণীগঞ্জের গোলামবাজারে চলে আসে। আমার বাসায় তিনি রান্নার কাজ নেন। পরিচয়ের দেড় মাস পর ২১ ডিসেম্বর মেয়েটির সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে আমার বিয়ে হয়।
জল্লাদ শাহজাহান আরও বলেন, মেয়ে ও তার মা বিয়ের আগে নানা কৌশলে আমার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেয়। আর বিয়ের দিন ১০০ টাকার তিনটি স্ট্যাম্পে একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে আমার গোছানো আরও ১০ লাখ টাকা নেয়। বিয়ের প্রায় দুই মাসের মাথায় আমার স্ত্রী বাসায় থাকা আরও ৫ লাখ নগদ টাকা ও গহনা নিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। আমি এ বিষয়ে অভিযোগ করতে গেলে থানা অভিযোগ নেয়নি। পরে জানতে পারি ১৫ ফেব্রুয়ারি সাথী আক্তার ফাতেমা আমার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে নালিশি মামলা করেছে। মামলায় সে দাবি করেছে, বিয়ের যৌতুক হিসেবে আমাকে এক লাখ টাকার মালামাল দেয় তার পরিবার। পাশাপাশি নগদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। আমি নাকি তার থেকে তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেছি। অথচ সে আমার টাকা প্রতারণা করে নিয়ে গেছে, সেটার প্রমাণ আমার হাতে আছে। তাই এসব প্রমাণ নিয়ে আমি গতকাল রোববার আদালতে সাথী আক্তার ফাতেমাসহ ৬ জনের নামে মামলা করেছি। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
জল্লাদ শাহজাহান বলেন, কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। আর কারাগারে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে আশীর্বাদ হিসেবে পাওয়া টাকাসহ মোট ১৮ লাখ টাকা আমি সাহায্য হিসেবে পাই। সেই টাকা দিয়েই মূলত আমি বিয়ে করে এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। আমি এখন কীভাবে বাঁচব, আমার জীবন কীভাবে চলবে, কোথায় থাকব কিছুই বুঝতে পারছি না। এখন খেয়ে না খেয়ে অনাহারে আমার জীবন চলছে।
জল্লাদ শাহজাহান আরও বলেন, আমি এখন দুই ও তিন দিন পর ভাত খাই। কেউ আমাকে খাবার দিলে খাই, না দিলে না খেয়ে থাকি। আমার থাকার জায়গা নেই। তাই ফুটপাতে, গ্যারেজে বা কেউ সাময়িক আশ্রয় দিলে সেখানে থেকে খুব কষ্টে সময় পার করছি। আমি আমার উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপির কাছে গিয়েছি কিন্তু কেউ আমাকে এক মুঠো ভাত দেয়নি, কাজ দেয়নি, সাহায্য-সহযোগিতা করেনি। এভাবে চলতে থাকলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।