চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় নিষিদ্ধ জালে ধ্বংস হচ্ছে রেনু পোনা
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার পদ্মা ও মেঘনা নদীর সীমানা। এ এলাকায় প্রায় ৪৪ হাজার নিবন্ধিত জেলে। মৎস্য বিভাগ থেকে জেলেদের বিভিন্নভাবে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার না করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হলেও তারা তা মানছে না। যে কারণে ছোট ফাঁদের নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছের রেনু পোনা।
সম্প্রতি নদী উপকূলীয় এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ছোট মাছ (রেনু পোনা) ধরার চিত্র। এসব রেনু পোনা ধরে বর্তমানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বাজার ও পাড়া-মহল্লায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতলব উত্তর, সদরের বিভিন্ন এলাকাসহ বিশেষ করে হাইমচর উপজেলার উপকূলীয় এলাকার জেলেরা নিষিদ্ধ কারেন্টজাল, চরঘেরা জাল, চায়না দোয়াইর বা চাই, পাঙ্গাস ধরার বড় সাইজের চাই, চিংড়ি পোনা নিধনকারী পুশ নেট, বাঁধা জাল ও গচি জাল ব্যবহার করে ছোট মাছ ও রেনু পোনা ধরা হচ্ছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মৎস্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ড যৌথ অভিযান চালিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে হিজলা পাচারের সময় ৬৫ লাখ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্টজাল জব্দ করে। এ ছাড়া জাটকা সংরক্ষণ অভিযানের দুই মাস ও মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের অভিযানের পরও বছরজুড়ে নিষিদ্ধ জাল জব্দ হচ্ছে।
নিষিদ্ধ জালে মাছের পোনা নিধন হয় এমন সংবাদের ভিত্তিতে সম্প্রতি অভিযান পলিচালনা করে মতলব উত্তর ও হাইমচর উপজেলা মৎস্য বিভাগ। এর মধ্যে হাইমচর উপজেলা মৎস্য বিভাগ গত ১৭ মে ছোট প্রজাতির মাছ ধ্বংসকারী নিষিদ্ধ ৪০ হাজার মিটার চরঘেরা জাল, ২০টি চায়না দোয়াইর ও পাঁচটি চিংড়ি পোনা নিধনকারী পুশ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে বিনষ্ট করে।
মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য বিভাগ গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অভিযান চালিয়ে ১৫টি পাঙ্গস মাছের পোনা ধরার দোয়াইর, ১০ হাজার মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ৩০টি চায়না দুয়াইর জব্ধ করে এবং জনসম্মুখে তা পোড়ানো হয়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস এই অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, ‘পোনা মাছ রক্ষায় আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এদিকে হাইমচরে মেঘনা নদীতে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করছে অসাধু জেলেরা। প্রতিদিন নিধন করা হয় কয়েক কোটি মাছের পোনা। বাঁধা জাল, গচি জাল, চায়না জালসহ নিষিদ্ধ জালগুলো নদীতে ফেলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন করে চরভৈরবী মাছের আড়তে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হয়।
চরভৈরবীর আড়তদার নজরুল ফকির বলেন, ‘আমার আড়তে গচি জালের মাছ বিক্রি হয়। কিন্তু বাঁধা জাল কিংবা চায়না জালের মাছ বিক্রি হয় না। অন্যরা বিক্রি করে কি না, জানি না।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ইউসুফ জুবায়ের শিমুল বলেন, ‘চরভৈরবী আড়তে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে নিধন করা মাছের পোনা বিক্রির বিষয়ে জানতে পেরেছি। আমি জেলেদের মাছের পোনা ধরা ও বিক্রি না করার জন্য বলেছি। তারা আমার কথা না মানলে তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে বলা হবে।’
হাইমচর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মাহবুব রশীদ বলেন, ‘নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছের পোনা ধরার সংবাদ পেয়ে নদীতে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু গচি জাল জব্দ করে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়। নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা রক্ষায় আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
চাঁদপুর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম বলেন, নিষিদ্ধ জালে মাছ ধরা বছরজুড়েই নিষিদ্ধ। মৎস্য বিভাগ কখনই এসব জালের অনুমোদন দেয় না। জেলেরা যাতে সুতার জাল ব্যবহার করে সে জন্য উৎসাহ দিতে বিনামূল্যে জালও দেওয়া হচ্ছে। তার পরও এক শ্রেণির জেলে নদীতে নেমে ছোট পোনা মাছ ধরছে। নদীর মৎস্য সম্পদ রক্ষায় জেলাজুড়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’