ঘূর্ণিঝড় রিমাল: ঝালকাঠিতে পানিবন্দি শতাধিক পরিবার
টানা ঝড়বৃষ্টির রাত শেষ হলেও ঝালকাঠিতে থামেনি ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব। দমকা বাতাস আর বৃষ্টির সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে নদী তীরবর্তী গ্রামের অধিকাংশ এলাকা। নদীর পানি বেড়েছে ৫ থেকে ৭ ফুট। জেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। রাত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে প্রায় দুই শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। এতে অনেক জায়গায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলার দুর্গম এলাকা কাঁঠালিয়ার উপজেলা পরিষদেও পানি ঢুকে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, বসতঘর, মাছের ঘের ও ফসলের মাঠ। এতে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
ঝালকাঠি শহরের পৌরসভা খেয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা নুপুর বেগম বলেন, ‘আমার বসতঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। রাতে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছি, সকালে এসে দেখি ঘরের মালামাল সব পানিতে ডুবে আছে। এখনো পানি নামেনি। সব মালামাল নষ্ট হয়ে যাবে।’
নলছিটির মালিপুর গ্রামের মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি খেটে খাওয়া মানুষ। আমার ঘরের মধ্যে হাঁটু সমান পানি উঠছে। এখন মালামাল সব ভিজে গেছে। রান্না, খাওয়াদাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। কেউ সাহায্যও দেয়নি।’
কাঁঠালিয়া উপজেলার লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, ‘রাতেই আমার ঘরে পানি উঠছে। এখানে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। তাই জোয়ার হলেই পানি ওঠে। এখন বন্যার পানিতে কোমর সমান তলিয়ে আছে। ঘরের মালামাল কিছুই রক্ষা করতে পারব না, সবই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা জানান, সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বিপদ সীমার ওপর থেকে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিতে তলিয়ে গেছে অসংখ্য বাড়িঘর। আজকের দিনের মধ্যে পানি কমলে মানুষের ক্ষতি কম হবে।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, ‘আমরা পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছি। এখনো যারা আসেনি, তারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে পারেন। আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। অনেকের বাড়িতে পানি উঠেছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে জেলা প্রশাসন থাকবে।’