সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা ইসির কাজ, কেন্দ্রে ভোটার আনার দায়িত্ব প্রার্থীর : সিইসি
উপজেলা পরিষদের ষষ্ঠ সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন করল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চতুর্থ ধাপে এ নির্বাচন শেষের কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে তা গড়ায় পঞ্চম ধাপে। যদিও প্রতি ধাপের মতোই এই ধাপেও ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। তবে, তার দায় নিতে রাজি নয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানপ্রধান হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা হলো তাদের কাজ, কেন্দ্রে ভোটার আনার দায়িত্ব প্রার্থীর। যদিও বিভিন্ন সময়ে ভোটগ্রহণকালীন হতাহত ও ভোটের আগের নানা অপ্রীতিকর ঘটনাকে ‘বাস্তবতা’ বলে স্বীকার করেছেন।
১৫ বছর আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। এরপর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬১ শতাংশের মতো। আর ২০১৯ সালে প্রথমবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ। এবার ভোট পড়ার হার আরও কম।
এবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচনে আজ রোববার পঞ্চম ধাপে ১৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলায় ৩৬.১৮ শতাংশ ভোট পড়ে। দ্বিতীয় ধাপের ১৫৩ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩৭.৫৭ শতাংশ। তৃতীয় ধাপে দেশের ৮৭ উপজেলায় ৩৮ শতাংশ ভোট পড়ে। চতুর্থ ধাপের ৬০ উপজেলায় ভোট পড়ে ৩৪.৭৭ শতাংশ এবং শেষ ধাপে ১৯ উপজেলায় এক তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে ভোট পড়ার হার ৪৩ দশমিক ৯১ শতাংশ।
আজ রোববার বিকেল পৌনে ৫টায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, অন্যান্যবারের চেয়ে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে সবচেয়ে কম। এ ব্যাপারে, আপনার মন্তব্য কী? এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এ নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক অংশগ্রহণ হয়নি। যখন রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক অংশগ্রহণ হয়, তখন ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বেড়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে সেদিক থেকে ভোট কম পড়ার এটি একটি কারণ হয়ে থাকতে পারে। আর ভোটারদের কেন্দ্রে আনার দায়িত্ব হচ্ছে প্রার্থীর। প্রার্থীরা তাদের কাছে আবেদন জানাতে পারে। এতে ভোটারা কতটুকু সাড়া দেবে, এটা তাদের ওপর নির্ভর করে। তবে, আমাদের জন্য সেটা বিবেচ্য নয়।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের জন্য বিবেচ্য হচ্ছে ভোটটা যেন শান্তিপূর্ণভাবে, সুষ্ঠুভাবে হয় এবং ভোটার যারা তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। এখন যদি তারা ওখানে জোর করে ভোট দিয়ে থাকে তাহলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। সেই দিকটা আমরা বিশেষ করে জোর দিয়েছি। কোনো কিছুই স্থির থাকে না। আশাকরি, এটা ইমপ্রুভ হবে।
এর আগে গত ৮ মে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শেষে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সিইসি প্রায় একই মন্তব্যই করেন। সেদিন তিনি জানান, ভোটার উপস্থিতির বিষয়টি তার কমিশনের কাজ না। নির্বাচন কমিশনের কাজ সুষ্ঠুভাবে ভোট হয়েছে কি না, ভোটাররা নিরাপত্তার সঙ্গে ভোট দিতে পেরেছেন কি না।
এবারের ভোট নিয়ে সন্তুষ্টির প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে আজ সিইসি বলেন, এটা সন্তুষ্টি, অসন্তুষ্টির বিষয় না। চট করে বলতে পারব না৷ আমরা হতাহতের খবর পাইনি। ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি, এমনটা হয়নি। সেদিক থেকে এটা ইতিবাচক। সেই দিক থেকে আমরা সন্তুষ্ট বোধ করছি। ভোটার পড়ার সংখ্যা ৬০ শতাংশ, ৭০ শতাংশ হতো তাহলে আপনাদের মতো আমরাও সন্তুষ্ট হতাম। আশাকরি, মানুষ আগামীতে আরও সচেতন হবে এবং সুশাসনের বিষয় নিয়ে আমাদের জনগণকে উপলব্ধি করাতে হবে এবং তারা সুশসানের যে গণতান্ত্রিক চেতনা তারাও হয়তো উপলব্ধি করে ভোটমুখী হবেন।
সিইসি বলেন, আমরা মোটামুটি ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের ভোট সম্পন্ন করলাম। এবার প্রতিটি জেলায় তিনটি বা চারটি ধাপে হয়েছে। এ জন্য প্রশাসনে কর্মকর্তাদের জন্য সহজ হয়েছে। স্বস্তিদায়কও হয়েছে। ২৬ উপজেলা নির্বাচন বাকি আছে। এর মধ্যে কয়েকটি এখনও মেয়াদপূর্তি হয়নি। কয়েকটি আদালতে নির্দেশনার কারণে স্থগিত রেখেছি। যথা সময়ে ওগুলো আমরা করব। তবে, উপজেলা নির্বাচন মোটামুটি শেষ হয়েছে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এক হাজার ১৮০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৩৫টি ভোটকেন্দ্রের হিসাব পেয়েছি। সেদিক থেকে ভোট পড়েছে ৪৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। কাজেই নিশ্চিত করে বলা যাবে না মোট কত শতাংশ ভোট পড়েছে। আজকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হযেছে। এর মধ্যে দুজন পোলিং অফিসার নির্বাচনি অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন। এই দিক থেকে আমরা কঠোর ছিলাম। মোট চারজন আহত হয়েছে। দুজন গুরুতর হয়েছে। সেখানে মোটামুটি বলা যায়, কোপাকুপি হয়েছে। খুব যে গুরুতর ওরকম কিছু নয়। আজকে ভোটার ছিল ৩০ লাখ ৪৬ হাজার। ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কিছু কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেই থাকে। অর্থের লেনদেন হয়ে থাকে। অনৈতিকভাবে অর্থের লেনদেনের খবরও আমরা পেয়ে থাকি। এগুলো বাস্তবতা। এগুলো উত্তরণের চেষ্টায় আমরা আলাপ-আলোচনা করে কীভাবে ঠিক করা যায়, তা করব। তবে, সার্বিকভাবে আমার মনে নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হয়েছে।
‘প্রশাসন, পুলিশের যে ভূমিকা তা প্রশংসনীয়’ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আমাদের নির্দেশনা তারা কঠোরভাবে প্রতিপালন করছেন এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছাও ছিল খুব ইতিবাচক।’ তিনি আরও বলেন, এবার নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল। দেখা গেছে, দুই একটি দল ছাড়া ওরা রাজনৈতিক প্রতীকে অংশগ্রহণ করেনি। যার ফলে নির্বাচনটা আগের মতো স্থানীয়ভাবে ব্যক্তিভিত্তিক হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহণ করেছেন, তবে রাজনৈতিক পরিচয়ে নয়।