দেশের স্বার্থ আদায়ে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ : মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা ভারতের বিরোধিতা করছি না। তবে, দেশের স্বার্থ রক্ষায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’
আজ মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। গতকাল সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরতে আজ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই। আমাদের সরকার তিস্তাসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি। এরা দেশপ্রেমিক সরকার নয়, দেশবিরোধী সরকার। দেশের মানুষের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা তাদের নেই। ভারতের রেল লাইন কানেক্টেভিটিতে বাংলাদেশে স্বার্থ কী? আমরা এ কথা বলছি।’
মির্জা ফখরুল জানান, স্থায়ী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে দুটি চুক্তি, পাঁচটি নতুন সমঝোতা স্মারক এবং তিনটি চুক্তি নবায়নসহ ১০টি চুক্তি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এসব চুক্তিগুলোতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে সভায় বলা হয়েছে, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনের কোনো চুক্তি না করা, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা বন্ধ না করা, একতরফাভাবে ভারতকে সব সুবিধা প্রদান করায় বাংলাদেশের স্বার্থ ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, কানেকটিভিটির নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত রেল যোগাযোগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগের সমঝোতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতা, ওষুধ সংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ এবং ভারতের ইনস্পেস ও বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, রেলমন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা, সমুদ্রবিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতাসহ সবগুলো সমঝোতায় বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভারতকে সব ধরনের সুবিধা দিয়েও ভারতের কাছে থেকে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ আদায় করতে শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। এটা ম্যান্ডেটহীন অবৈধ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বহিঃপ্রকাশ।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে হওয়া চুক্তিগুলো দেশের স্বার্থবিরোধী হওয়ায় বিএনপি সেগুলো প্রত্যাখ্যান করছে। এই বিষয়ে আগামী ২৮ জুন সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
সোমবার রাতের ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তির জন্য দোয়া করা হয়।
সভায় বিএনপি নেতারা বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য খালেদা জিয়ার অবদান, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ সাম্প্রতিক গণতান্ত্রিক বিশ্বে অতুলনীয়। বেগম খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রদান করে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এ হীন চক্রান্ত করছে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার।
সভায় বিএনপির নেতারা আরও বলেন, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রীকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও সংবিধানবিরোধী। এ মামলায় জামিন পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার। বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। চিকিৎসকরা তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুপারিশ করেছেন। দলের পক্ষ থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে প্রেরণের দাবি জানানো হয়েছে। এমনকি, পরিবারের পক্ষ থেকে দুইবার তার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু, অবৈধ সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করেছে। সভায় অনতিবিলম্বে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।
স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত জলসীমায় নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ফলে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেন্টমার্টিনের যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। এই অবৈধ সরকারের নতজানু পরারষ্ট্রনীতির কারণেই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বারবার হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সভা জানায়, কিশোরগঞ্জে হাওড়ের মাঝখানে সড়ক নির্মাণ এবং বেশ কিছু এলাকায় মাটি ভরাট করে কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ করায় ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নিষ্কাশিত না হওয়ার কারণে ভয়াবহ দুর্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহরসহ বিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অসংখ্য মানুষ সীমাহীন দুদর্শার মধ্যে পড়েছে। দুর্গত এলাকায় সরকারের কোনো ত্রাণ তৎপরতা দেখা যায়নি। অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের জন্য সভায় দাবি জানানো হয়।
বিএনপির একটি ত্রাণ টিম অতিদ্রুত সিলেট সফর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও সভায় জানানো হয়। এ ছাড়া ওষুধের মূল্য ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করায় জনগণের যে দুর্ভোগ সেটির জন্য সরকারের দুর্নীতি ও ভ্রান্তনীতিকে দায়ী করে অবিলম্বে ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য হ্রাসের জোর দাবি জানান বিএনপি নেতারা।