‘সাইকেল চাই না, আমার বাবার লাশটা চাই’
‘বাবার কাছে একটি সাইকেল চেয়েছিলাম, বাবা আমাকে কিনে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন আর সাইকেল চাই না। আমি শুধু আমার বাবাকে শেষ বারের মতো একটু দেখতে চাই। আমার বাবার লাশটা দেশে এনে দিন।’
কান্না করতে করতে এ কথাগুলো বলছিল মাদারীপুরের মোস্তফাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়াড়ভাঙ্গা গ্রামের মৃত সৌদি আরব প্রবাসী মিলন মাতুব্বরের (৩৫) ৯ বছরের ছেলে আবির মাতুব্বর।
গত ১৮ জুন রাতে সৌদি আরবে ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন মিলন মাতুব্বর। পরে প্রবাসী সহকর্মীরা তাঁকে রিয়াদ শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে ছয় দিন পর চিকিৎসাধীন থেকে মারা যান তিনি।
বাবাকে একনজর দেখার আকুতি জানিয়ে শিশু আবির আরও বলে, ‘আমি বড়। আমার ছোট দুই ভাই ও মা আছে। আমি মাদ্রাসায় পড়ি। আমার বাবা সৌদিতে মারা গেছেন। এখন আমার পড়ার খরচ কে দেবে? আমাদের দেখার মতো কেউ নাই। আপনারা আমার বাবাকে এক নজর দেখার ব্যবস্থা করে দিন।’
স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে পাঁচ বছর আগে সৌদি আরবে যান সিরাজুল হক মাতুব্বরের ছেলে মিলন মাতুব্বর। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজো। রিয়াদ শহরের হালুজারায় থেকে কাজ করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেননি তিনি। সৌদির আকামাসহ নিজ খরচ শেষে কোনো রকম টেনেটুনে সংসারের খরচ চালাতেন তিনি। গত ১৮ জুন রাতে সৌদি আরবে বাসায় ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর এক সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা রিয়াদ শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে তাঁকে ভর্তি করে। সেখানে ছয় দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। সৌদি আরব থেকে তার পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর জানালে স্বজনদের মধ্যে আহাজারি শুরু হয়।
নিহত মিলনের প্রতিবেশী রুহুল আমিন ও কেরামত আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, তাঁর কয়েক লাখ টাকার দেনা রয়েছে। তবে তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তারা চান সরকার যেন তাঁর মরদেহটি দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয়।
নিহত মিলনের স্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেখার মতো কেউ রইল না। আমাদের তিন শিশু ছেলেকে এখন কে দেখবে? আমাদের প্রায় ২০ লাখ টাকার দেনা। এই দেনা কীভাবে শোধ করব জানি না। আমার স্বামীর মরদেহটা দেখতে চাই। কিন্তু সৌদি থেকে টাকা খরচ করে মরদেহ দেশে আনার সামর্থ্য আমাদের নেই। সরকারের কাছে দাবি, আমার স্বামীর মরদেহটা যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয়।’
শেষ বারের মতো ছেলের মরদেহটি দেখতে একভাবে সবার কাছে আকুতি জানান নিহত মিলনের মা-বাবাও।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মারুফুর রশিদ খান বলেন, ‘আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করে মরদেহটি দেশে আনার চেষ্টা করব। তবে আর্থিক সহযোগিতা করার মতো আমাদের কাছে কিছু নেই। কিন্তু আবেদন করলে স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা করব।’