চাকরির প্রলোভনে তরুণীদের অশালীন ভিডিও বানিয়ে ব্ল্যাকমেইল, গ্রেপ্তার ৮
কখনও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে, কখনও মডেল বানানোর কথা বলে তরুণীদের ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নিয়ে তাদের জিম্মি করা হতো। পরে বাধ্য করা হতো দেহ ব্যবসায়। দেহ ব্যবসার ছবি ও ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং করে অর্থ আদায় করে আসছিল একটি চক্র। সেই চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাজধানী ঢাকা, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর ও যশোরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ বুধবার (২৬ জুন) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সংস্থাটির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—চক্রের মূলহোতা ও মেডিকেল শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান (২৫) ও তার প্রধান সহযোগী খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন (২৬), মো. জাহিদ হাসান কাঁকন (২৮), তানভীর আহমেদ ওরফে দীপ্ত (২৬), সৈয়দ হাসিবুর রহমান (২৭), শাদাত আল মুইজ (২৯), সুস্মিতা আক্তার ওরফে পপি (২৭) ও নায়না ইসলাম (২৪)।
সিআইডি প্রধান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠতি বয়সী তরুণীদের টার্গেট করে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি, ট্যালেন্ট হান্টিং ও মডেলিংয়ের নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদে ফেলতো একটি চক্র। এরপর তরুণীদের ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে অনলাইনে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো।
মোহাম্মদ আলী মিয়া আরও বলেন, একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া নামে ফেসবুক আইডি ও পেজ খুলে ফ্রিল্যান্সিং কাজ, লোভনীয় চাকরি, মডেল বানানো, মেধা অন্বেষণের নামে অল্প বয়সী তরুণীদের কাছ থেকে কৌশলে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের দেহ ব্যবসায় নামানোর এক চক্রের সন্ধান পায় সিআইডি।
অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী জানান, শুরুতে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরির বিজ্ঞাপন, কখনো মডেল তৈরি, কখনও ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ শীর্ষক প্রতিযোগিতার আয়োজন করত চক্রটি। এতে যারা সাড়া দিত তাদের নিয়ে টেলিগ্রামে গ্রুপ খুলত।
মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, এরপর তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বিদেশি বায়ারদের কাছে পাঠানোর কথা বলে মেয়েদের আপত্তিকর ছবি হাতিয়ে নিত চক্রটি। হাতিয়ে নেওয়া সেসব অর্ধনগ্ন ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নগ্ন হয়ে ভিডিও কল বা সরাসরি অসামাজিক কাজে বাধ্য করত। শত শত তরুণীকে তারা টার্গেট করে মডেল ও কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে ব্ল্যাকমেলিং করেছে।
মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, চক্রটির টেলিগ্রাম গ্রুপে হাজার হাজার সাবসস্ক্রাইবার রয়েছে। যারা একটি নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে ওই গ্রুপগুলোতে যুক্ত থাকত। চক্রটি ভিডিওকলের সবকিছু গোপনে ধারণ করে রাখত। এরপর ভুক্তভোগীদের যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করত চক্রটি। এভাবেই চক্রটির হাতে আধুনিক যৌন দাসীতে পরিণত হয়েছিল শতশত তরুণী। দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার চক্রের মূলহোতা ও তার প্রধান সহযোগীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করেছে।