'জিন সাপ' আতঙ্ক, হাসপাতালে ১০
যশোরের চৌগাছা উপজেলার রাণীয়ালি গ্রাম। এই গ্রামের বেশ কয়েকজনের দাবি, তাদের সাপে কেটেছে। কিন্তু, দেখা যায়, শরীরে সাপে কামড়ানোর কোনো ক্ষত নেই। তবে, সাপে কেটেছে মনে করে তারা ছুটতে থাকেন স্থানীয় ওঝা ও কবিরাজের কাছে। এমন ঘটনা পরে ‘জিন সাপ’র ঘটনায় গড়ায়। অনেকের বিশ্বাস, তাদের জিন সাপে কামড়ানোয় ক্ষতের চিহ্ন নেই। এক সপ্তাহের আতঙ্কে অসুস্থ হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। যাদের ১০ জন এখনও যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানের চিকিৎসকরা বলছেন, ভর্তি রোগীরা সাপ আতঙ্কে মাসহিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য গোবিন্দ চন্দ্র ঢালী জানান, গত বুধবার রাতে সাপের কামড়ে মারা যান রাণীয়ালী গ্রামের আব্দুল হকের স্ত্রী রাবেয়া বেগম। এরপরই এলাকায় সাপ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই সাপে কামড়েছে দাবি করে অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করেন। তাদের শরীরে জ্বালাপোড়া হতে থাকে। কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু কেউই সাপ দেখেনি।
যশোর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ভর্তি হওয়া ১০ রোগীর মধ্যে আটজন নারী ও দুজন পুরুষ। এদের কারও শরীরে সাপে কামড়ানোর তেমন কোনো উপসর্গ নেই। সে কারণে কাউকেই অ্যান্টিভেনাম ইনজেকশন দেওয়া হয়নি। যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাণীয়ালি গ্রামের প্রান্ত মন্ডল বলেন, রান্নাঘরের জ্বালানী কাঠ তোলার সময় হাতে কিছু একটা কামড়ে দেয়। ডান হাতের কবজিতে লাল দাগের সৃষ্টি হয়। ওঝার কাছে গেলে তিনি শরীরে বিষ রয়েছে বলে জানান। এরপরই হাসপাতালে ভর্তি হই। একই গ্রামের উৎপল মন্ডলের স্ত্রী তমালিকা বলেন, রাতে ঘুমিয়ে সকালে ওঠার পর দেখি হাত জ্বলছে। এক পর্যায়ে হাত অবশ হয়ে যায়। ওঝার কাছে গেলে তিনি বলেন যে শরীরে বিষ রয়েছে। এরপরই হাসপাতালে ভর্তি হই।
যশোর জেনারেল হাসপতালের মহিলা মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র নার্স শিউলি সরকার বলেন, মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে এ ধরনের আটজন রোগী ভর্তি আছে। তাদের সাপে কামড়েছে দাবি করা হলেও তাদের শরীরে সাপে কাটার কোনো উপসর্গ নেই। সবাই এখন সুস্থ রয়েছে। তারপরও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার আবু হায়দার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, কোনো রোগীকে সাপে কামড় দেয়নি। সবাই আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এটাকে মাসহিস্টিরিয়া ইলনেস বলা হয়। মানুষের নিউরো হরমোন ও মানসি দ্বন্দ্বের কারণে এরকম হয়ে থাকে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ বলেন, অনেকেই আতঙ্কে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তারা সবাই সুস্থ আছেন। তিনি বলেন, মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে। বাড়িঘরের ঝোপঝাড় পরিস্কার রাখতে হবে। সত্যি সত্যি সাপে কামড়ালে সরাসরি হাসপাতালে চলে আসা উচিৎ। সাপের ছবি তুলে রাখতে পারলে চিকিৎসা সহজ হয়। হাসপাতালে এন্টিভেনমের কোন সংকট নেই বলে জানান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।