হবিগঞ্জে পাটের বাম্পার ফলন
বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও হাওরে পরিমিত পানির উপস্থিতিতে হবিগঞ্জে এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। খাল, বিল ও ঝিলে পানি থাকায় সহজেই জাগ দিয়ে পাট ঘরে তুলতে পেরেছেন কৃষকরা। কিন্তু জেলায় সরকারি পাট ক্রয় কেন্দ্র নেই এবং সরকারি মূল্য নির্ধারিত না থাকায় দালাল ফরিয়াদের মাধ্যমে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকদের।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা পাট আবাদের জন্য বিখ্যাত। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাটকলে বিক্রি করা হয় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পাট। পাট বিক্রির জন্য মাধবপুর উপজেলা সদরে রয়েছে ছয়টি আড়ৎ। এ ছাড়া মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়াইন বাজারে রয়েছে আরও ছয়টি আড়ৎ। এসব আড়ৎ থেকে প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই করে পাট যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাটকলগুলোতে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশে মাধবপুর উপজেলার নিচু জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। লাখাই উপজেলায়ও নিচু জমিতেও আবাদ হয়েছে বিভিন্ন জাতের পাট।
মাধবপুর পৌর এলাকার মা ট্রেডার্স এর আড়ৎদার সিরাজ মিয়া জানান, এ বছর দুই হাজার টাকা মণে পাট বিক্রি হচ্ছে। আরও বেশি দাম না পেলে পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ কমে যাবে। মাধবপুরকে পাট চাষ ও বিক্রির একটি কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু মাধবপুর উপজেলার ১২টি আড়ৎ থেকে প্রতিবছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার মণ পাট বিক্রি হয়। আড়ৎদাররা প্রতি মণে ১০ টাকা কমিশন পান। মাধবপুরের আড়তে শুধু হবিগঞ্জের পাটই বিক্রি হয় না। পার্শ্ববর্তী ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার নাসিরনগর উপজেলার পাটও আসে এখানকার আড়তে।
মাধবপুর উপজেলার বুল্লা গ্রামের কৃষক করম আলী জানান, অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে তারা পাট চাষ করেন। নিজেদের প্রয়োজনের পাট রেখে অবশিষ্ট পাট বাজারে বিক্রি করেন। একসময় ব্যাপকভাবে পাট আবাদ হলেও এখন পাট আবাদ কমেছে। কারণ ভাল দাম পাওয়া যায় না। ভাল বীজেরও অভাব রয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভিসি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) আজীবন সদস্য ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, পাটপণ্য পরিবেশ বান্ধব ও জনপ্রিয়। পরিকল্পনার অভাবে ও সিনথেটিক পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে আমাদের সোনালী ফসলটি হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারিভাবে বিভিন্ন ফসলের বীজ কৃষকদের দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক ফসলের জন্য প্রকল্প ও প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা করা হয়। পাটের জন্যও অনুরুপ ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারিভাবে কৃষকদের ভাল বীজ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে ফসলের সুদিন ফিরবে। পাশাপাশি কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দিকেও নজর দিতে হবে। পাট পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এই পণ্যের জনপ্রিয়তা বাড়ায় এখন পাটের চাহিদা বেড়েছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে পাটের সোনালী দিন ফিরিয়ে আনতে হবে।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরে আলম জানান, জেলায় এ বছর ৪১০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে দেশি বিভিন্ন জাতের পাট আবাদ হয়েছে ৯৫ হেক্টর জমিতে। তোষা পাটের মধ্যে তোষাপাট-৫ আবাদ হয়েছে ৫০ হেক্টর জমিতে এবং তোষাপাট-৮ আবাদ হয়েছে ৪০ হেক্টর জমিতে। কেনাফ পাটের মধ্যে কেনাফ-৩ আবাদ হয়েছে ১২০ হেক্টর এবং কেনাফ-৫ আবাদ হয়েছে ৯৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া মেস্তা-৩ পাট আবাদ হয়েছে ১০ হেক্টর জমিতে।
উপপরিচালক জানান, গতবছর জেলায় ৪০০ হেক্টর জমিতে তিন হাজার ৪৯৯ বেল পাট উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর ভাল আবহাওয়ার কারণে ফলন বেশি হবে। চার হাজার বেল পাট উৎপাদনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘পাট উৎপাদনের ব্যয় তেমন বেশি নেই। যে জমিতে পাট আবাদ করা হয় সেই সময়ে তা পতিত থাকে। এ ছাড়া পাটের শাক, পাটকড়ি থেকেও কৃষকরা লাভবান হন।’