যে কারণে মেট্রোরেল চালু হতে দেরি হচ্ছে
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে গত ১৮ জুলাই বন্ধ ঘোষণা করা হয় মেট্রোরেল চলাচল। এক মাস পার হওয়ার পর গতকাল শনিবার (১৭ আগস্ট) থেকে মেট্রোরেল চালুর কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। তবে আগামী সাত দিনের মধ্যে মেট্রোরেল চালুর চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহণ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। আজ রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির জানান, দ্রুততম সময়ে মেট্রোচালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী সাত দিনের মধ্যে মেট্রোরেল চালু চেষ্টা করা হবে।
এদিকে, গতকাল মেট্রোরেল চালু না হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, কারিগরি লাইন, কোচ ও সংকেত ব্যবস্থা—সবই ঠিক আছে। কিন্তু, মেট্রোরেলের বড় কর্তারা বাড়তি সুবিধা নিচ্ছেন—এমন অভিযোগ এনে কর্মবিরতিতে যান কর্মচারীরা। দুর্বৃত্তদের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি স্টেশন কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ নম্বর ছাড়া সবগুলো স্টেশন যাত্রী ওঠা-নামার জন্য প্রস্তুত। কারিগরি কোনো সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও কর্মচারীদের কর্মবিরতির কারণেই মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে আজ রোববার সকালে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) জনসংযোগ কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘১৭ আগস্ট থেকে মেট্টোরেল পরীক্ষামূলক চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাদের অপারেশন করার দায়িত্ব তারা কর্মবিরতিতে রয়েছেন। তাই মেট্টোরেল চালু করাটা এ মুহূর্তে কঠিন।’ কবে নাগাদ চালু হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি নিয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মহোদয় বলতে পারবেন।’
পরে ডিএমটিসিএলের এমডি এম এ এন ছিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, কর্মচারীদের যৌক্তিক সব দাবি মেনে নেবেন তারা। এ বিষয়ে নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ডিএমটিসিএল সুত্র জানায়, ডিএমটিসিএল কোম্পানিতে বিভিন্ন প্রকল্পের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রায় সবাই প্রশাসন ক্যাডার থেকে আনা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন প্রকৌশল দপ্তরের সাবেক কর্মকর্তারাও চুক্তিতে নিয়োজিত রয়েছেন। কর্মকর্তার এ সংখ্যা প্রায় ৫০ জনের মতো। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পে আরও কর্মকর্তা নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত সড়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। অবসরে যাওয়ার পর ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর চুক্তিতে তিনি মেট্রোরেলের এমডি নিযুক্ত হন। এখনও তিনি এই দায়িত্বে আছেন।
অন্যদিকে, মেট্রোরেল চালানো, টিকিট বিক্রি, রক্ষণাবেক্ষণসহ সব দায়িত্ব নিচের দিকের স্থায়ী কর্মীদের। তারা ১০ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারী। তাদের সংখ্যা সাত শতাধিক। ৮ আগস্ট থেকে তারা বৈষম্য দূর করার ছয় দফা দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন। ২০১৯ সাল থেকে এই কর্মচারী নিয়োগ শুরু হয়। নিয়োগ এখনও চলমান।
জানা যায়, ডিএমটিসিএল শতভাগ সরকার মালিকানাধীন কোম্পানি। চুক্তিভিত্তিক এবং বাইরে থেকে আসা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মূল বেতনের ২ দশমিক ৩ গুণ বেতন পান। আর ডিএমটিসিএলের ১০ থেকে ২০তম গ্রেডের স্থায়ী কর্মীরা পান দুই গুণ। এটা একটা বড় অভিযোগ নিচের দিকের স্থায়ী কর্মীদের। এ ছাড়া কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডও (প্রদেয় ভবিষ্য তহবিল) চালু হয়নি তাদের।
কর্মচারীদের দাবি, বর্তমান বেতনকাঠামো পরিবর্তন করে ‘বৈষম্যহীন’ বেতনকাঠামো, অর্থাৎ সব গ্রেডের একই রকম বেতনকাঠামো যা জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর ২ দশমিক ৩ গুণ হারে যোগদানের তারিখ থেকে বকেয়াসহ দিতে হবে। এ ছাড়া চাকরিতে যোগদানের তারিখ থেকে বকেয়াসহ সিপিএফ সুবিধা দিতে হবে।
দাবির মধ্যে আরও রয়েছে রাষ্ট্রের অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের মেট্রোরেলের সঙ্গে সমন্বয় করে ১০ম গ্রেডের উচ্চতর পদ, ১৫তম ও ১৬তম গ্রেডের পদগুলোর গ্রেড উন্নয়ন করে ‘অর্গানোগ্রাম’ গঠন করতে হবে। শিক্ষানবিসকাল শেষে অন্যান্য সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির মতো যোগদানের তারিখ থেকে স্থায়ীকরণ (নিয়মিতকরণ) করতে হবে। মেট্রোরেলের স্টেশন, ডিপোসহ সব স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ পরিবহনব্যবস্থা নিশ্চিত করে দায়িত্ব দিতে হবে। এর বাইরে রয়েছে কর্মক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘স্বৈরাচারী’ মনোভাব ও ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণ এবং ব্যক্তিগত আক্রোশের যেন না ঘটতে পারে—সেই নিশ্চয়তা প্রদান ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।