কখন নির্বাচন হবে সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের নয় : ড. ইউনূস
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, একটা প্রশ্ন সবার মনে; কখন আমরা ছেড়ে যাব? আমি বলতে চাই, দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। জনগণ সিদ্বান্ত নিবে আমরা কখন যাবো।
আজ রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে? এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেবেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয় উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয়— আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যে কোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।
ড. ইউনূস আরও বলেন, একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন, তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ—আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসংগতভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করব।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের ঘেরাও করে আমাদের কাজে বাধা দেবেন না। সবাই মিলে তাদের বোঝান তারা যেন এ সময়ে তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, লাখো লাখ মানুষের রক্ত ও মা বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে যে স্বাধীন দেশ আমরা পেয়েছিলাম, তাকে ফ্যাসিবাদ সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। ভাষণে ছাত্রজনতার আন্দোলনের মাধ্যমে এ নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এ পর্যন্ত সহযোগিতার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদও জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৫ বছরের স্বৈরশাসন দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। এটি একটি চ্যালেঞ্জ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এ বাংলাদেশের প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পতিত স্বৈরশাসক নষ্ট করেছেন। কোটি কোটি মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছেন। দেশের মালিকানা নিজের ও পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন স্বৈরাচার।বিচার বিভাগ নিয়ে তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে দুর্নীতি মুক্ত ও স্বাধীন বিচার বিভাগ গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। বিচার বিভাগে কেউ যেন অবিচারের শিকার না হয় আমরা সেটি চেষ্টা করব। তিনি বলেন, লাখো লাখ মানুষের রক্ত ও মা বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে যে স্বাধীন দেশ আমরা পেয়েছিলাম, সে দেশকে ফ্যাসিবাদ সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে।
আমরা অনুধাবণ করছি আমাদের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা অনেক, আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি, আমি আপনাদের বলব ধৈর্য ধরতে হবে, বিচারের আগে আদালত অঙ্গনে হামলা করে বিচার করা আমাদের ছাত্রদের আন্দোলনের ফসলকে সমস্যায় ফেলবে।