কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ইচ্ছা এই সরকারের নেই : অ্যাটর্নি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ইচ্ছা অন্তবর্তী সরকারের নেই। সংবিধানে সংগঠন ও রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে স্বাধীনতা রয়েছে, এই সরকার সেটিতে বিশ্বাস করে। গত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সঙ্গে জড়িতদের অন্যায়-অবিচারের বিচার আদালতের মাধ্যমে হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যে নতুন স্বাধীনতা এসেছে, সেখানে সবার বাক্স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হতে হবে। রাজনৈতিক দল পরিচালনার স্বাধীনতা এ সময় বন্ধ হতে পারে না।
আজ মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহবুবুল উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানিকালে ১ সেপ্টেম্বর দিন পিছিয়ে এ আদেশ দেন। এ সময় আদালতে রিটকারি আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
এ মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানিকালে অ্যাটর্নি জেনারেল হাইকোর্টকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কোন উদ্দেশ্য নেই কোন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ বা নিবন্ধন বাতিল করা। সংবিধানে সংগঠন ও রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে স্বাধীনতা রয়েছে এই সরকার সেটিতে বিশ্বাস করেন। আর বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সাথে জড়িতদের অন্যায় অবিচারের বিচার আইন-আদালতের মাধ্যমে হবে। সেটার জন্য কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা সমীচীন নয়। গত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সঙ্গে জড়িতদের অন্যায়-অবিচারের বিচার আদালতের মাধ্যমে হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যে নতুন স্বাধীনতা এসেছে, সেখানে সবার বাক্স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হতে হবে। রাজনৈতিক দল পরিচালনার স্বাধীনতা এ সময় বন্ধ হতে পারে না।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আওয়ামী লীগে অনেক ভালো নেতাকর্মী আছেন যারা তাদের আদর্শে বিশ্বাস করেন। তাই তাদের সে বিশ্বাসের দল নিষিদ্ধ করা আদালতের কাজ নয়। ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে সেই জনতা’ এমন স্লোগানের প্রেক্ষাপটে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যে নতুন স্বাধীনতা এসেছে সেখানে সবার বাক-স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হতে হবে। তাই রাজনৈতিক দল পরিচালনার স্বাধীনতা এসময় বন্ধ হতে পারে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আমরা দেখেছি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়েছে। যেটি আমাদের কারোরই কাম্য ছিল না। বিগত কর্তৃত্ববাদী শাসনের সাথে বিচার বিভাগের সমর্থনের ও অবিচারের প্রেক্ষাপটেই এমন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে বিচার বিভাগে কোন আক্রমণ হলে সেটি আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণেরই বিষয়। তাই কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নিয়ে মাঠের রাজনীতি আদালতে টেনে আনা ঠিক না। আর কোন রাজনৈতিক দল এই রিট নিয়ে আদালতে আসেনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নিয়ে মাঠের রাজনীতি আদালতে টেনে আনা ঠিক হবে না। এ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল এই রিট নিয়ে আসেনি। রিটে আওয়ামী লীগকে পক্ষভুক্ত করা হয়নি, কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি। এই রিট মেইনটেনেবল (গ্রহণযোগ্য) না। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়েছে, যা আমাদের কারোরই কাম্য ছিল না। গত কর্তৃত্ববাদী শাসনের সঙ্গে বিচার বিভাগের সমর্থন ও অবিচারের প্রেক্ষাপটেই এমন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে বিচার বিভাগে আক্রমণ হলে সেটি আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণের বিষয়।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল রিটটি খারিজ চেয়ে হাইকোর্টকে বলেন, ‘এই রিটটি যাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে সেই আওয়ামী লীগকে রিটে পক্ষভুক্ত করা হয়নি এবং কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি। এই রিটের কোন লোকাস স্ট্যান্ডই নেই। এই রিট মেনটেনেবল নয়। তাই রিটকারীকে কষ্ট করার আবেদন করছি।
এক পর্যায়ে রিটকারী আইনজীবী শুনানির জন্য আরও সময় চাইলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহবুবুল উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ১ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
এই রিটেই অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সর্বনিম্ন তিন বছর চেয়ে করা অংশটি আগের শুনানির দিন ‘নট প্রেস’ (উত্থাপিত নয়) করেন রিটকারী। ওইদিন শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আদালতকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান অনুযায়ী আছেন। তারা কতদিন থাকবেন সেটা আদালতের আদেশের জন্য নিয়ে আসার বিষয় না। রিটের এই বিষয়টি মেইনটেইন অ্যাবল না। মানবাধিকার সংগঠন সারডা সোসাইটির পক্ষে নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া এই রিটটি করেন।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আদালতকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান অনুযায়ী আছেন। তারা কতদিন থাকবেন, সেটা আদালতের আদেশের জন্য নিয়ে আসার বিষয় না। রিটের এই বিষয়টি মেইনটেবল না।’
এর আগে গত ১৯ আগস্ট ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে হত্যার দায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দল হিসেবে তাদের নিবন্ধন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। একইসঙ্গে রিট আবেদনে যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে শেখ হাসিনা রয়েছে, সেগুলোর নাম পরিবর্তনও চাওয়া হয়। মানবাধিকার সংগঠন সারডা সোসাইটির পক্ষে নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া রিটটি দায়ের করেন।
রিটে দেশ সংস্কারের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সর্বনিম্ন তিন বছর চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে পাচার করা ১১ লাখ কোটি টাকা ফেরত আনতে এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের বদলি করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।