রাঙামাটিতে শ্রমিক লীগনেতাকে পিটিয়ে হত্যা
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার চাঞরি বাজারে হাটবারে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে যুবদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। পালিয়ে যাওয়ার সময় আব্দুল মান্নান নামে শ্রমিক লীগের এক নেতাকেও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে রাউজানের চারা বটতল চৌধুরী মার্কেট এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে শ্রমিক লীগনেতার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত আব্দুল মান্নান (২৭) কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি সুগারমিল ডাকবাংলো এলাকার কবির আহাম্মদের ছেলে।
কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজীব চন্দ্র কর শ্রমিক লীগ নেতাকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থল রাউজান থানার অধীনে হওয়ায়, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ওই থানায়।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, আজ বেতবুনিয়া চাঞরি বাজারের সাপ্তাহিক হাটের দিন। সকালে একদল রাজনৈতিককর্মী বাজারে পণ্য কেনাবেচা করতে আসা হেলাল উদ্দিন (৫৮), তৈয়ব হোসেন ঝুনু (৫২), উক্যচিং মারমা (৩৫), ব্যবসায়ী প্রদীপ দে (৬০) ও সেলুনের দোকানদার রাজীব শীলকে (৪২) মারধর করে। আহতরা পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। তারা দূরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পর কাউখালী ও বেতবুনিয়া এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মীরা পালিয়ে গেছে। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একদল দৃর্বৃত্ত বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়ে বিভিন্নজনকে মারধর করে। এসময় অন্যত্র সরে যাওয়ার চেষ্টা করে বাজারে আসা শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুল মান্নান। একটি সিএনজি অটোরিকশাতে করে রাউজানের দিকে রওনা হয়। তাকে গোদারপাড় এলাকায় সিএনজি নামিয়ে ব্যাপক মারধর করে চারা বটতল এলাকায় ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে নিহতের পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে উদ্ধার করে রাউজানের জেকে মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কাউখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী জানান, যুবদলের আলমগীর, মামুন, শফি ও আবুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী এদিন বাজারে আসা নিরীহ রাজনৈতিক কর্মী, সাধারণ পাহাড়ি ও অন্যান্যদের ওপর গণহারে মারধর শুরু করে। এতে অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। অনেকে বিক্রি করতে আনা পণ্য ফেলে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যায়। এই ঘটনার বিচার দাবি করছেন তিনি। এর আগে ৬ আগস্ট কাউখালীতে বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলায় শহীদুল ইসলাম রনি নামে ছাত্রলীগের আরেক কর্মী নিহত হয়। শান্তিপূর্ণ কাউখালীতে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
নিহত আব্দুল মান্নানের ভায়রা কোরবান আলী জানান, হাসপাতাল থেকে মরদেহ বেতবুনিয়ার সুগারমিল ডাকবাংলো এলাকার বাড়িতে আনা হয়েছে। আব্দুল মান্নানের বুকে ও বাম হাতে জখমের চিহ্ন আছে। আব্দুল মান্নানের বাড়ি থেকে কাউখালী থানার পুলিশ মরদেহ রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পেশায় গাড়িচালক আব্দুল মান্নানের দুই স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
কাউখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলছেন, এখন অনেকেই আমাদের দলের নাম ভাঙিয়ে অনেক কিছু করছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি, তারা যেন কঠোর পদক্ষেপ নেয়। আমরা কোনোভাবেই কাউখালীর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট হোক এটা চাই না। যারা এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করছে তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
যে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের তিনজনকে চেনেন না এবং বাকি একজন দলের কোনো পদে নেই বলেও জানিয়েছেন বিএনপির এই নেতা।
কাউখালী থানার ওসি রাজীব চন্দ্র কর বলেন, মরদেহ রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে রাউজান থানায় মামলা করা হবে।