আশুলিয়ায় মরদেহের স্তূপের ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি
আশুলিয়া থানার সামনে গুনে গুনে ভ্যানে মরদেহের স্তূপ করার ঘটনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রধান করা হয়েছে এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সাজিদুর রহমানকে।
আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা জেলার নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
আশুলিয়া থানার সামনে গা শিউরে ওঠা ওই ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে আসার পর দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। আত্মগোপনে চলে গেছেন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক মিনিটি ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোভ্যানের ওপর ছয়-সাতজনের নিস্তেজ দেহ স্তূপ করে চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা। সেই স্তূপের ওপর আরেকটি দেহ চ্যাংদোলা করে তুলছিলেন দুজন। তাদের মধ্যে ভিডিওতে পুলিশের হেলমেট ও ভেস্ট পরা একজনকে দেখা যায়।
তাদের একজন ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন বলে শনাক্ত করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে ভ্যানে থাকা লাশগুলো গুম করতে পুলিশের একটি লেগুনায় তোলা হয়। পরে নিজেদের দায় এড়াতে ওই লেগুনায় আগুন দেওয়া হয়। এতে লেগুনায় থাকা মরদেহগুলো পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়।
এই ঘটনার সেই ভিডিওর ক্লিপ দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলে ঘটনা তদন্তে অ্যাডিশনাল এসপি ও ডিএসবি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা জেলার নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, কারা উপস্থিত ছিলেন—সেটিও পাওয়া গেছে। পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য নামগুলো এখনই প্রকাশ করছি না। খুব শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে। যেগুলো ভিডিওতে এসেছে সেগুলো দেখেছি, তবে ফিজিক্যাল এভিডেন্স এখনও পাওয়া যায়নি। এগুলো নিয়েও আমাদের কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই গতকাল শনিবার একটি নিখোঁজ ডায়েরি হয়েছে। আমরা এটি নিয়েও কাজ করছি। আশা করছি, খুব ভালো একটা রেজাল্ট আসবে।’
এদিকে ঘটনার ২৬ দিন পর ওই ভিডিও ক্লিপ দেখে নিজের স্বামীকে শনাক্ত করেছেন গৃহবধূ লাকী আক্তার। এর আগে স্বামীর নিখোঁজ থাকার বিষয়ে আশুলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন তিনি।
কীভাবে মরদেহ শনাক্ত করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে লাকী আক্তার বলেন, ‘দেহগুলোর স্তূপ থেকে ব্রাজিলের জার্সি পরিহিত একটি হাত বের হয়ে থাকতে দেখা যায়। সেই হাত দেখে আমি আমার স্বামীর মরদেহ শনাক্ত করি। আমার স্বামীর নাম আবুল হোসেন।
পোশাককর্মী লাকী আক্তার জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে ব্রাজিলের জার্সি পরেই ঘর থেকে বেড়িয়েছিলেন আবুল হোসেন। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি তিনি।
স্থানীয় এক ভাঙারি ব্যবসায়ী জানান, ঘটনার পরের দিন সেখান থেকে ছয়টি পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেগুলোর মধ্যে চারটি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি দুজনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে তিনি নিজে আমতলী কবরস্থানে দাফন করেন।
তাদের মধ্যে একজন নিখোঁজ আবুল হোসেন (৩৩) হতে পারেন বলেও ধারণা এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর।
লাকী আক্তার ও আবুল হোসেন দম্পতি থাকতেন বাইপাইল পশ্চিমপাড়ায় একটি ভাড়া বাড়ির ঘরে। তাদের দুই সন্তান। স্বামীর শূন্যতায় নয় বছর ও ছয় মাস বয়সী দুটি সন্তান নিয়ে দিশেহারা এই গৃহবধূ।
সংসারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তির মৃত্যুতে আগামীতে কিভাবে দিন চলবে সেই ভাবনায় ব্যাকুল লাকী আক্তার।