পাবনায় অবৈধ বালু উত্তোলনে পদ্মায় ভাঙন, নদীগর্ভে বিলীন ফসলি জমি
স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে পাবনা ও কুষ্টিয়ার প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। নদীর তীর ঘেঁষে বালু তোলার কারণে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে কৃষকদের শতশত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের চর কণ্ঠগজরা এলাকায় প্রকাশ্যে ১৫ থেকে ২০টি ড্রেজার লাগিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। শতাধিক ট্রলারের মাধ্যমে এসব বালু চলে যাচ্ছে পাবনার ভাড়ারা, দোগাছী, পাকশী, সুজানগর এবং কুষ্টিয়ার পাংশা, কুমারখালী ও রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন অন্তত তিন কোটি টাকার ওপর বালু তোলা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষকরা বলেন, ‘নৌকার ওপর অস্ত্র নিয়ে তারা বালু উত্তোলন করেন। বছরের পর বছর এই কাজ চলছে। আমরা ধারণা করেছিলাম সরকার পতনের পর বালু উত্তোলন বন্ধ হবে। কিন্তু প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ দেখছি না। আর আমরা প্রতিবাদ করলেই আমাদের দেওয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। আপনাদের চোখেই দেখুন কীভাবে শতশত ফসলি জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বা দেখার কেউ নেই।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফের সহযোগী আব্দুল আলিম, পাবনার ভাড়ারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রিত প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে এই বালু উত্তোলনের মহাকর্মযজ্ঞ চলছে। নৌ-পুলিশ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট মহলকেও ম্যানেজ করে বালু তোলা হয়। গত বুধবার বালু উত্তোলন করতে নিষেধ করায় স্থানীয় তিন কৃষককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ কথা বলতে সাহস করছেন না।
এ ব্যাপারে আব্দুল আলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পাবনার ভাড়ারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান বলেন, ‘গত এক মাস ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু এসবের সঙ্গে আমি জড়িত নই।’
এ বিষয়ে পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা খাতুন এনটিভি অনলাইনকে জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কেউ সদর উপজেলার মধ্যে বালু তুললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিষয়টি সম্পর্তে আমি অবহিত নই। তবে খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনেক চেষ্টা করেও জেলা পুলিশ সুপার মো. মোরতাজা আলী খানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা যখন অভিযানে যাই, তখন তারা পালিয়ে যায়। আমাদের জনবলও কম। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আবারও অভিযান চালাব।’