আশুলিয়ায় অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকের পুঁতে রাখা মরদেহ উদ্ধার
আশুলিয়ায় পুঁতে রাখা এক অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক রেহানা পারভীনের (৩৭) অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ‘ইন্টারপোল’ ও ঢাকার অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের অনুরোধে নিখোঁজ রেহানার সন্ধান করতে গিয়েই আজ বৃহস্পতিবার রাতে আশুলিয়ার চাকলগ্রামের একটি বাড়ির আঙিনায় পুঁতে রাখা মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
রেহানা পারভীন ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার পাতিলঝাঁপ গ্রামের লেহাজ উদ্দিনের মেয়ে।
ঢাকা জেলা দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম জানান, ১৬ বছর আগে ব্যারিস্টারি পড়তে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান রেহানা পারভিন। সেখানেই পরিচয় হয় নবাবগঞ্জের সন্তান আওলাদ হোসেনের সঙ্গে। গ্রহণ করেন দেশটি নাগরিকত্বও। এই দম্পতির রয়েছে তিন মেয়ে ও এক ছেলে।
দীর্ঘদিন ধরেই পারিবারিক বিরোধ চলছিল এই দম্পতির। মারধর, হত্যার চেষ্টাসহ পারিবারিক সহিংসতার বিষয়টি গড়ায় সে দেশের আদালত পর্যন্ত।
রেহানার মা আইরিন আক্তার বলেন, ‘আমি অনেক কষ্টে জায়গা জমি বিক্রি করে স্বপ্ন নিয়ে মেয়েকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছিলাম। আশা ছিল আমার মেয়ে বড় ব্যারিস্টার হবে। আজ আমার মেয়ের গলা মরদেহ তোলা হচ্ছে। নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার পর তাকে দাফন কাফন করা হয়নি। পরনের কাপড় দিয়ে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। আমি এই কষ্ট কোথায় রাখব, আমি এর বিচার চাই।’
রেহেনা পারভীনের অস্ট্রেলিয়ার ফেরার টিকিট কনফার্ম করার পরও তিনি ফেরেননি। কিন্তু স্বজনদের অনেকেই ভেবেছিলেন তিনি হয়তো স্বামীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ফিরে গেছেন। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া থাকা তিন সন্তান দীর্ঘ সময় মাকে না পেয়ে বিষয়টি দেশে মামা এবং নানিকে জানালে সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
রেহানার মা আইরিন আক্তার ঢাকার নবাবগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় ঢাকার অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন ও তাদের অনুরোধে সারা দেয় আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল।
পরে ইন্টারপোল অস্ট্রেলিয়া নাগরিক হিসেবে রেহানা পারভীনের সন্ধান চেয়ে প্রথমে বাংলাদেশের পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সকে চিঠি দেয়। সেই চিঠির তদন্তের ভার দেওয়া হয় ঢাকা জেলা পুলিশকে। পুলিশ আটক করে রেহানা পারভীনের ননদ পাপিয়া আক্তার ও তাঁর সহযোগী আমজাদ হোসেনকে।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পাপিয়া আক্তারের বাড়ির আঙিনা থেকে উদ্ধার করা হয় রেহানা পারভীনের গলিত মৃতদেহ।
লাশ গুমের ঘটনায় আটক সন্দেহভাজন আমজাদ হোসেন সম্পর্কে রেহানা পারভীনের চাচা। তিনি জানান অপর দুজনের সহযোগিতায় মরদেহটি পুঁতে ফেলা হয়।
ঢাকা জেলা দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম জানান, এ বিষয়ে আগামীকাল সংবাদ সম্মেলন করবেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহমেদ মুঈদ। সেখানেই বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে।