স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা হত্যা, শেখ সেলিমসহ ১৫০০ আসামি করে মামলা
গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শওকত আলী দিদার হত্যার ঘটনায় পাঁচ দিন পর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গোপালগঞ্জ ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমসহ ১১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও এক হাজার ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিহত দিদারের স্ত্রী রাবেয়া রহমান গোপালগঞ্জ সদর থানায় এ মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান।
মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে বিজিএমইএর সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, সভাপতি কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খানের মেয়ে কান তারা খান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান এবং সাধারণ সম্পাদক জি এম সাহাব উদ্দিন আজম, টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল বাশার খায়ের, সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভগেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক শেখ আয়নাল হোসেন, মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম শিকদার, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান টুটুল, কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক সিকদার, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির, সাধারণ সম্পাদক আলীমুজ্জামান বিটু, মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হুজ্জাত হোসেন লিটু মিয়া, টুঙ্গিপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সাইফুল ইসলামসহ ১নং থেকে ৩০ নং আসামিকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। মামলায় অন্য আসামিরা হলেন গোবরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফয়সল কবির কদর, একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান টুটুল, লতিফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাফর হোসেন কালু, নিজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহমেদ আলী মিনা (ধলুমীনা), টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শুকুর আলী শেখ, গোপালগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর আমিন মোল্লা, টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নুরুল আমিন, শেখ কামরুজ্জামান টবা, শেখ ওয়ালিদুর রহমান হীরা, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, গ্রাম্য ডাক্তার আলিমুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শওকত আলী দিদার নিহতের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ এ পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
মামলার বিবরণীতে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী স্ত্রী সন্তানসহ মাতা-পিতার কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী যাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) সেলিমুজ্জামান সেলিমসহ কয়েক শত নেতা-কর্মীর গাড়ি বহর। গাড়ি বহরে ছিলেন, শওকত আলী দিদারও। বহরটি বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে সদর উপজেলার চরপাথালিয়া এলাকায় পৌঁছামাত্র আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। এতে গাড়ি বহরের লোকজন প্রাণভয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করলে আক্রমণকারী সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র টেঁটা, রামদা, বল্লাম, চাইনিজ কুড়াল, ধারালো ছোরা ও লাঠিসোটা দিয়ে মারপিট শুরু করে। এ সময় শওকত আলী দিদারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে লাঠি ও কাঠ দিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে মহাসড়কের ঢালে ফেলে রাখে।
পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে পিছু হটে তারা। ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে মারপিটের শিকার হন সময় টেলিভিশনের চিত্র সাংবাদিক এইচ এম মানিক। এর কিছুক্ষণ পর মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা আবারও হামলা চালায়। এ সময় বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না ও তাদের সন্তানসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অন্তত ৩৫ নেতাকর্মীকে।
এই ঘটনার প্রায় তিন ঘন্টা পরে ঘটনাস্থলের থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ঢাকা- খুলনা মহাসড়কের পাশে চরপাথালিয়া নামক স্থান থেকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত শওকত আলী দিদার ঢাকার জুরাইন এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে।