আরেক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আছাদুজ্জামান মিয়া
রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার একটি হত্যা মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুর রহমান এই আদেশ দেন। এদিন ঢাকার সিএমএম আদালতে পূর্বের সাত দিনের রিমান্ড শেষে হাজির করে পুলিশ। এরপর পুলিশ রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গত ১২ সেপ্টেম্বর খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান জনিকে পুলিশি হেফাজতে ‘ক্রসফায়ারের নামে হত্যার’ অভিযোগে গ্রেপ্তার ডিএমপির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ড শেষে আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্ব) তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
গত ১১ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের একটি দল।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালে খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান জনিকে পুলিশি হেফাজতে ‘ক্রসফায়ারের নামে হত্যা’র অভিযোগে ডিএমপির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশের বর্তমান ও সাবেক ১৩ কর্মকর্তাসহ ৬২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। ঘটনার ৯ বছর পর গত ৩ সেপ্টেম্বর খিলগাঁও থানায় জনির বাবা ইয়াকুব আলী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটে নূরুজ্জামান জনি ও তার সহপাঠী মইন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে দেখতে যায়। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেরার পথে আসামিরা জনি ও মইনকে ডিবি পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালায়। পরে তাদের ডিবি ঢাকা মেট্রোপলিটন-দক্ষিণ কার্যালয়ে নিয়ে গিয়েও নির্যাতন করা হয়। তখন নুরুজ্জামান জনির ৭ (সাত) মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুনিয়া পারভিনসহ আত্মীয়স্বজনরা খিলগাঁও থানা, ডিবি দক্ষিণ অফিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিসসহ বিভিন্ন থানায় হন্য হয়ে খুঁজে বেড়ান। প্রায় দুদিন ধরে খোঁজাখুঁজি করার পরেও নুরুজ্জামান জনির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে ২০ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর খেলার মাঠের আশপাশের মানুষজন চিৎকার করা কণ্ঠে কান্নার শব্দ শুনতে পায়। নির্যাতিত ব্যক্তিটি পানি-পানি বলে চিৎকার ও মা-মা বলে আর্তনাদ করতে থাকেন। এজাহারে আরও বলা হয়েছে, বাদী ঘটনাস্থলের এলাকার পাশে সি-ব্লকের বাসিন্দা লাভলী বেগম রাতের কান্নার শব্দ শুনেছে বলে জানান। এ-ব্লকের বাসিন্দা সাইফুদ্দিনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার সেতু জানান, রাত ৩টার দিকে ‘ওমাগো, মা, মা.. বাঁচাও’ বলে কয়েকবার চিৎকার শুনেছেন। সেই সময় আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা গুলির শব্দ শুনতে পায়। ভোর রাতে বাদীসহ সাক্ষীরা ও প্রতিবেশীরা খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর মাঠের দিকে গিয়ে পুলিশদের দেখতে পায়। আসামিরা বলে যে, নুরুজ্জামান জনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তার মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
আরও বলা হয়েছে, বাদী ঢাকা মেডিকেল মর্গে গিয়ে দেখতে পান নুরুজ্জামানের বুকের বামে, ডান দিকে, দুই হাতের তালুতে ১৬টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। তার সব শরীর ঝাঁঝরা করে ফেলেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসা করলে তারা কর্কশ ভাষায় গালিগালাজ করে। লাশ গ্রহণ না করলে মামলা দেওয়ার হুমকিও দেয় তারা।