বায়তুল মোকাররমে দুপক্ষের সংঘর্ষ
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সাবেক খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমীনের ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের কিছু সময় আগে এ ঘটনার সূত্রপাত। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন।
জানা গেছে, জুমার নামাজ শুরুর আগে বায়তুল মোকাররমের বর্তমান খতিব হাফেজ মাওলানা ড. মুফতি ওয়ালিয়ুর রহমান খান বয়ান করছিলেন। সে সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পালিয়ে থাকা খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমীন তার অনুসারীদের নিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঢোকেন। একপর্যায়ে রুহুল আমীন বর্তমানে খতিবের সামনে থাকা মাইক্রোফোনে হাত দেন। এরপর বর্তমান খতিবের অনুসারীরা রুহুল আমিনের অনুসারীদের প্রতিরোধ করেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। মসজিদের মধ্যে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার পর মসজিদের সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ওই সময় মসজিদ থেকে বেরিয়ে পড়েন। সে সময় মসজিদ থেকে স্লোগান দিতে দিতে একদল মুসল্লি বের হন। তারা আওয়ামী বিরোধী নানান স্লোগান দিতে থাকেন।
এসব ঘটনার সময়কার কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে দেখা যায়, যখন মসজিদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, তখন মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে বসতে বলা হয়। মসজিদের আদব রক্ষা করতে বলা হয়। কিন্তু, উত্তেজিত মুসল্লিদের বসানো যাচ্ছিল না। মাইকে বলা হয়, ‘সবাই বসুন। দরুদ শরীফ পড়ুন। আল্লার ঘর মসজিদ। আমরা সবাই শান্তি-শৃঙ্খলার সঙ্গে বসে যাই। মসজিদের সম্মান রক্ষা করি।’
মাইকে যখন এসব কথা বলা হচ্ছিল, তখন ভাঙচুরের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। এরপরও মাইকে সবাইকে অনবরত শান্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু, কাউকে বসানো যাচ্ছিল না।
পরে পরিবেশ কিছুটা ঠান্ডা হলে সোয়া একটার দিকে আবার সাধারণ মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করেন। এসব ঘটনার পর সেখানে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। খবর পেয়ে মসজিদে যান সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। এরপর পরিবেশ কিছুটা শান্ত হয়। তখন জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। নামাজের পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মুসল্লিদের দ্রুত মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়।
একজন মুসল্লি বলেন, ‘সাবেক খতিব অন্যায়ভাবে শেখ হাসিনাকে সাপোর্ট করে এসেছিলেন। যখন হাসিনার পতন হয়, তখন তিনি পালিয়ে যান। কিন্তু, হঠাৎ কোন সাহসে বা কী কারণে তিনি এখানে এসেছেন তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমার ধারণা, তিনি পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এখানে এসেছেন। এ সংঘর্ষের পর অনেক লোক আহত হয়েছেন। রক্তাক্ত হয়েছেন। পরে রুহুল আমীন আর নামাজ পড়াতে পারেননি।’
আরেক মুসল্লির বলেন, এখান থেকে যেহেতু রুহুল আমীন পালিয়ে গেছেন, তাহলে তিনি কেন এলেন? শেখ হাসিনার দোসররা সব সেক্টর থেকে পালিয়ে গেছে। কিন্তু, তারা পাল্টা বিপ্লব করার চেষ্টা করছেন। এটাও তেমন। তারা এখানে আরেকটি বিপ্লব করার জন্য এসেছেন। তারা আগেভাগে একটা সেটআপ করে রেখেছেন, আজকে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। আর সাধারণ মানুষ তাদের আবার বিতাড়িত করে দিয়েছেন।
আরেক মুসল্লির দাবি, মসজিদের মধ্যে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনা ঘটিয়েছেন মুফতি রুহুল আমীনের লোকজন এবং তারা এখানে এসেছেনই এসব ঝামেলা করতে।
তবে, অন্য পক্ষের কারও সঙ্গে এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কী কারণে বা কেন মুফতি রুহুল আমীন ফিরে এলেন তা জানা সম্ভব হয়নি।