শহীদ মিনারে গণসমাবেশ, ৮ দফা দাবি সংখ্যালঘু জোটের
দেশের বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘু নির্যাতন, মন্দির, স্থাপনা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থাসহ আট দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণসমাবেশ করছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট।
আজ শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় দলে দলে বিভিন্ন সনাতনী সংগঠনের ব্যানারে শহীদ মিনারে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। শঙ্খ বাজিয়ে ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু করেন তারা।
সমাবেশে বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের প্রতিনিধি প্রদীপ কান্তি দে বলেন, ৯ আগস্ট থেকে আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের উপর যে অত্যাচার হচ্ছে সেটা বন্ধ করার জন্য আমরা সংগ্রাম করছি। আমাদের উদ্দেশ্য ক্ষমতায় বসা নয়, দেশকে অস্থিতিশীল করা নয়। আমরা কেবল অধিকারের জন্য এসেছি। আমাদের আট দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্যই আমরা সংগ্রাম করছি।
এসময় সমাবেশে যেন রাষ্ট্রবিরোধী ও ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য না দেওয়া হয় সেজন্য সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
অ্যাডভোকেট সুশান্ত অধিকারী বলেন, সরকার পতনের পর থেকেই যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, লুটপাট শুরু হয়েছে তাতে বোঝা যায় এদেশের সংখ্যালঘুরা কতটা অনিরাপদ। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন। নাহলে এই সমস্যা কখনোই নিরসন হবে না। পতিত সরকার সংখ্যালঘুদের অবহেলা করায়, বৈষম্য সৃষ্টি করায় তাদের পরিণতি ভালো হয়নি। সুতরাং অনতিবিলম্বে বৈষম্য নিরসন করে আট দফার বাস্তবায়ন করতে হবে।
সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব ও মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে, হিন্দু যুব মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি গৌতম হালদার প্রান্ত, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ও বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট বিধান বিহারী গোস্বামী, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী প্রমুখ।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ ইসকনের সাধারণ সম্পাদক লীলারাজ ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দীপঙ্কর সিকদার, বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সভাপতি আশীষ চন্দ্র দাশ, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত অধিকারী, বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের মহাসচিব শ্যামল কান্তি নাগসহ আরও অনেকে।
৮ দফা দাবিসমূহ
১. সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্যে ‘নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন’ গঠনের মাধ্যমে ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’ গঠনপুর্বক দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. অনতিবিলম্বে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করতে হবে।
৩. ‘সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করতে হবে।
৪. হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে।
৫. ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রনয়ন ও ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন’ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্যে উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করতে হবে।
৭. ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড’ আধুনিকায়ন করতে হবে।
৮. শারদীয় দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি দিতে হবে। প্রতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটি প্রদান করতে হবে।