স্কুলছাত্র হত্যা মামলায় পঞ্চগড়ে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর তাঁতীপাড়া এলাকার স্কুলছাত্র আসাদুজ্জামান পায়েলকে (১৭) অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে পঞ্চগড় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১-এর বিচারক এস এম রেজাউল বারী এই আদেশ দেন।
প্রায় ৯ বছর পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায় দিলেন আদালত। পায়েল স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের বলরামপুর তাঁতীপাড়া এলাকার মহির উদ্দিনের ছেলে নুরুজ্জামান (৩৮), বলরামপুর ডাহেনা পাড়ার দুদু মিয়ার ছেলে ফরহাদ হোসেন (৩০) ও বলরামপুরের রশিদুল ইসলামের ছেলে হাসানুল ইসলাম (৩২)। রায় শুনানির সময় আসামিদের মধ্যে ফরহাদ হোসেন হাজির থাকলেও অপর দুই আসামি নুরুজ্জামান ও হাসানুল পলাতক।
মামলার এজহার ও আদালত সূত্রে জানা যায়, দেবীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর তাতীপাড়া এলাকার স্কুলছাত্র আসাদুজ্জামান পায়েল ২০১৫ সালের ১৮ জুন সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের দেউনিয়ার বাজারে হালখাতার উদ্দেশে বের হয়। ওদিন তার বাবা সুলতান আলী ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরদিন ছেলের মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে তিনদিনের মধ্যে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে ২০ জুন সুলতানের ভাই মহির উদ্দিন দেবীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপরে ২২ জুন ভোরে সুলতান বাড়ির পাশের একটি পাটক্ষেতে প্রকৃতি ডাক সাড়া দিতে গেলে ফরহাদ ও রশিদুলের মধ্যে পায়েলের হত্যাকাণ্ডে নিয়ে আলাপচারিতা করতে শোনেন। পরে বিষয়টি ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়দের জানালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নুরুজ্জামান, ফরহাদ ও রশিদুলকে আটক করা হয়। পরে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হলে তারা হত্যার কথা স্বীকার করে। ২২ জুন দেবীগঞ্জ থানায় করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের দেওয়া তথ্যমতে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এই মামলায় ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট ওই তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুর রহমান। এরপর দীর্ঘ ৯ বছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে সোমবার দুপুরে আদালত এই দণ্ডাদেশ দেন।
মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী এ বি এম জুলফিকার আলী নয়ন বলেন, ওই আসামিরা যে পায়েলকে হত্যা করেছে আমরা আদালতে তা সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে আজ আদালত ওই তিন আসামির মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন।