কর্ণফুলী নদীতে সাম্পান মাঝিদের বৈঠা বর্জন, ১০ ঘাটে যাত্রী পারাপার বন্ধ!
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর ১০টি ঘাটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বৈঠা বর্জন ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে ‘কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন’ এর অন্তর্ভুক্ত একাধিক সংগঠন। বংশ পরম্পরায় পেশাদার পাটনিজীবী (সাম্পান মাঝি) সমিতিগুলোকে চসিকের সদরঘাট, অভয় মিত্র ঘাট ও বাংলাবাজার নৌ-ঘাট তিনটি না দিয়ে বহিরাগতদের খাস আদায়ের দায়িত্ব দেওয়ার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর এসব ঘাটে সাম্পান চলাচল বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করছে ১২ শতাধিক সাম্পান মাঝি।
এতে নতুন ব্রিজ ঘাট, তোতার বাপের হাট, বিডব্লিউ ঘাট, দক্ষিণপাড় পুরাতন ব্রিজঘাট, সদর ঘাট, অভয় মিত্র, কর্ণফুলী ঘাট, বাংলাবাজার ঘাট, সল্টগোলা ঘাটে (পাটনিজীবী নাই) ইঞ্জিনচালিত সাম্পান চলাচল বন্ধ দেখা যায়। তবে জরুরি রোগী সেবা ও খাদ্যদ্রব্যের পারাপারে মানবিকতা দেখাচ্ছেন মাঝিরা। নদীর অন্যান্য ঘাটে যাত্রী পারাপার চলছে। কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন ও ইছানগর সদরঘাট সাম্পান মালিক সমিতির সভাপতি এসএম পেয়ার আলী জানান, ২০০৩ সালের পাটনিজীবী নীতিমালা তোয়াক্কা না করে একের পর এক অবৈধভাবে মাঝিদের ঘাট ছাড়া করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এতে দেয়ালে মাঝিমাল্লাদের পিঠ ঠেকে যাওয়ায় বাধ্য হয়েছে বৈঠা বর্জন ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করতে।
চরপাথরঘাটা ব্রিজঘাট সাম্পান চালক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পেশাগত সাম্পান মাঝি (পাটনিজীবী) থেকে ঘাট কেড়ে নিয়ে পাটনিজীবী নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ইজারা দিচ্ছে। ঘাটহারা মাঝিরা চসিকে লিখিত অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। তাই বৈঠা বর্জন চলছে।’
অপরদিকে, ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ পেশাদার জন্মগত পাটনিজীবী সমিতিকে নৌ-ঘাটগুলো ইজারা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু চসিকের প্রধান রাজস্ব নির্দেশনাটিও মানছেন না বলে মাঝিদের দাবি।
ইছানগর বাংলাবাজার সাম্পান মাঝি সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ লোকমান দয়াল বলেন, ‘চসিকের বোঝা উচিত ঘাট হারালে শত শত মাঝিরা তাঁদের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করবে। অনেকের বাপ দাদা তিন পুরুষের এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।’
বাংলাবাজার সদরঘাটের মাঝিরা জানান, প্রতি বছর ১৯ ঘাট থেকে রাজস্ব আদায় হতো প্রায় ৬ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু ১৪৩১ বঙ্গাব্দে এসে আইনি জটিলতায় এবার ঘাটগুলো ইজারা দিতে পারেনি চসিক। সে সুযোগে খাস কালেকশনের নামে চসিকের একাধিক অসাধু কর্মকর্তারা নিজের আখের গোছাচ্ছেন।
দৈনিক আদায়কৃত টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সাদা কাগজে চসিক সিল দিয়ে টাকা পরিশোধের সার্টিফিকেট দেওয়া হলেও সেখানে টাকার পরিমাণ উল্লেখ নেই। রাজস্বের টাকা লুটপাট করতেই চসিকের গুটিকয়েক কর্মকর্তা এমন অপকৌশল বেছে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে অভয় মিত্র ঘাটের সহযোগী হিসেবে নিয়োজিত ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু নাসের সাজ্জাদ বলেন, ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সিটি করপোরেশন থেকে ঘাট নিয়েছি। অবৈধভাবে নিইনি। আজ থেকে খাস কালেকশন করার কথা দৈনিক সাড়ে তিন হাজার করে। কিন্তু ঘাটে এসে দেখি অবস্থান ধর্মঘট। সাম্পান চলছে না। এতে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত এটির সমাধান হোক। ইতোমধ্যে সাম্পান সমিতির মাঝিদের প্রস্তাব দিয়েছি বসার।’
এ বিষয়ে কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সভাপতি এসএম পেয়ার আলী বলেন, ‘বৈঠা যার ঘাট তার, এই দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করবো। প্রতিটি ঘাটের সকল সাম্পান মাঝিদের নিয়ে গঠিত সমিতির অনুকূলে ঘাট ইজারা দিতে হবে। বহিরাগতদের ঘাট দিয়ে খাস কালেকশন চলবে না।’
নৌ-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. একরাম উল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন স্যারদের জানিয়েছি। এটি যেহেতু চসিকের রাজস্ব শাখার বিষয়। তবে নৌ-পুলিশ মাঠে রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ মানতে হবে। কিছু করার নেই। খাস কালেকশনে ঘাট চলছে। যেহেতু আদালতের নির্দেশে স্থগিত ইজারা। রিট শুনানির জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।’