বাবা, সৎ মা ও বোনকে হত্যার পর মামলা করেন ছেলে
সাভারের আশুলিয়ায় একই পরিবারের বাবা, মা ও মেয়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা জেলা পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন।
পিবিআই পুলিশ সুপার জানান, ছেলে বাবা, সৎমা আর বোনকে হত্যার পর নিজেই থানায় যান মামলা করতে। পিবিআই পুলিশ সুপার জানান, পরিকল্পিত ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছেলে তানভীর হাসান হিমেল ও তাঁর সহযোগী তরিকুল ইসলাম তারেক ওরফে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার আদ্যোপান্ত।
পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর সাভারে আশুলিয়া থানার উত্তর ভাদাইল গ্রামের একটি ভবনের ৪র্থ তলায় নিজেদের ফ্লাট থেকে উদ্ধার করা হয় মিজানুর রহমান বাচ্চু (৫৩), তার চতুর্থ স্ত্রী স্বপ্না বেগম (২৮) ও মেয়ে জান্নাতুলের (৪) মরদেহ। মিজানুর রহমান বাচ্চু চতুর্থ স্ত্রী স্বপ্না বেগম ও মেয়ে জান্নাতুল এবং প্রথম স্ত্রীর সন্তান তানভীর হাসান হিমেল একই সঙ্গে বসবাস করতেন। একই তলায় অন্য পাশের রুমে থাকতেন মিজানুর রহমান বাচ্চুর পূর্ব পরিচিত তরিকুল ইসলাম তারেক হৃদয়। ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৪র্থ তলার ধোঁয়া দেখে হিমেল ও তারেক আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করলে বাসার অন্য ভাড়াটিয়া ও স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে আগুন নেভায় এবং মিজানুর রহমান বাচ্চু, স্বপ্না ও মেয়ে জান্নাতুলের মৃতদেহ খাটের উপর শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পায় এবং থানায় খবর দেয়।
ঘটনার পর স্বপ্নার বোন লাবণ্য আক্তার বাচ্চুর প্রথম পক্ষের ছেলে তানভীর হাসান হিমেলকেসহ থানায় যান এবং অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন।
পিবিআই পুলিশ সুপার আরও বলেন, ঘটনার পর ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে গত ৪ অক্টোবর ঢাকার নবাবগঞ্জের বারুয়াখালী থেকে তরিকুল ইসলাম তারেককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্য মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত হাতুড়ি, পুতুল এবং সিজার (কাঁচি) জব্দ এবং গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় গত ২৪ অক্টোবর আশুলিয়ার জিরাবো থেকে আটক করা হয় তানভীর হাসান হিমেলকে।
পিবিআই পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার দিন (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার দিকে স্বপ্না বেগম মেয়ে জান্নাতুলকে নিয়ে স্কুলে চলে যান। এ সময় মিজানুর রহমান বাচ্চু তাঁর কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। সকাল পৌনে ৯টার দিকে হিমেল ও হৃদয় এবং বাচ্চুর শয়নকক্ষে প্রবেশ করেন। হিমেল হাতুড়ি দিয়ে বাচ্চুর মাথায় পরপর দুটি আঘাত করেন এবং তারেক বাচ্চুর পা চেপে ধরে রাখেন। পরে তারেক বালিশ চাপা দিয়ে বাচ্চুর মৃত্যু নিশ্চিত করে মরদেহ খাটের উপরে কাঁথা দিয়ে ডেকে রেখে স্বপ্না বেগম এবং জান্নাতুলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। সকাল সোয়া ১০টার দিকে স্বপ্না মেয়েকে নিয়ে বাসায় এসে কলিং বেল চাপ দিলে হিমেল ভেতর থেকে দরজা খুলে দেন। স্বপ্না শয়নকক্ষে প্রবেশ করে বাচ্চুকে ডাকতে থাকে তখন তারেক পিছন থেকে স্বপ্না বেগমের গলা চেপে ধরে বিছানার উপরে ফেলে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন। এ সময়ে মেয়ে জান্নাতুল চিৎকার করে উঠলে হিমেল তাকে মেঝেতে ফেলে মুখ চেপে ধরে এবং পাশে থাকা খেলনা পুতুল দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর আসামীরা মরদেহ তিনটিকে খাটের উপরে পাশাপাশি শুইয়ে বিছানার চাদর দিয়ে ডেকে রাখেন। এরপর লুট করেন আলমারীতে থাকা স্বর্ণালংকার। পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রুমের ভেতরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে সিজার (কাঁচি) দিয়ে লোহার শিটের দরজা ছিদ্র করে বাইরে থেকে দরজার ভিতরের হ্যাজভোল্ট লাগিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর ধোঁয়া চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করেন। তাদের চিৎকার শুনে বাসার অন্য ভাড়াটিয়া ও স্থানীয় লোকজন এসে রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন নেভায় এবং তিনজনের মরদেহ দেখে থানায় খবর দেয়।