‘ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চ’ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রতিহত করতে ডাকা গণজমায়েত থেকে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আজ রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে গণজমায়েত’ ব্যানারে সমাবেশ করা হয়। ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের এই সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ‘গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে রাজনীতির অধিকার নাই।’
এ সময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না বলেও জানান হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করবে, আমরা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক এ সময় বিশ্বের নানা জায়গায় বাংলাদেশের দূতাবাসে যারা ফ্যাসিবাদের হয়ে কাজ করেছে তাদেরও বদল চান।
অপর সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা গত ১৬ বছর ভুলে গিয়ে তিন মাসের পেছনে লেগেছি।’ এ সময় আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের কথা গণমাধ্যমে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
আন্দোলনের পরিপূর্ণ ফল ঘরে তুলতে সারজিস আলম সুশীল সমাজকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ১৬ বছরের অপকর্মের কথাগুলো বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে সুশীল সমাজকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও বিচারের মাধ্যমে তাদের রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করার দাবি জানিয়েছে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চ। বক্তারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে বিচার করতে হবে, যাতে কোনো ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আমরা নূর হোসেনকে ধারণ করে জুলাই বিপ্লব করেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ইতিহাস ধ্বংস করেছে।’
উমামা ফাতেমা আরও বলেন, ‘আমরা যখন রাষ্ট্র গঠনের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করছি, তখন দিল্লি বসে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা বর্তমান সরকারকে বলতে চাই, এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিচার করতে হবে। এমন বিচার করতে হবে, যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। যাতে কেউ মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে।’
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, “স্বৈরাচারের জননী দিল্লি বসে ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশের রাজনীতির বড় একটি দিক দিল্লি কেন্দ্রিক, তাই আমরা স্লোগান দেই, ‘দিল্লি না ঢাকা’। এই আলোচনা সব সময় থাকবে।”
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম, ‘৫ আগস্ট স্বৈরাচারের বিষদাঁত উপড়ে ফেলেছি, তবে তিন মাস পর তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশের মানুষ তাদের জায়গা দেবে না।’
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আশরেফা আক্তার বলেন, ‘মধ্যরাতের ভোট চোর, অর্থ চোর, তিনটি গণহত্যায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নাকি গণতন্ত্র উদ্ধার করতে আসবে! তাদের মতো এত নির্লজ্জ দল আর নেই! যারা দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, তারা নাকি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে! এদের এত সাহস আসে কোথা থেকে? যারা একটি পদ্মাসেতুর নাম করে ৩০টি সেতুর টাকা পাচার করেছে!’
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আকরাম হোসেন রাজ বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে যে জনস্রোত দেখেছি, সেটা যদি আমরা ধরে রাখতে পারি, তাহলে তিন মাস না, তিনশ বছরেও কেউ শব্দ করতে পারবে না।’
আকরাম হোসেন আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে নির্যাতন করত। এখন আবু সাইদের স্লোগান দেখি। তবে আবু সাইদের চেতনা বুকে ধারণ করতে হবে। তা না হলে আওয়ামী লীগের মতো ঝরে পড়তে হবে। চেতনা বিক্রি করলে বেশি দিন টেকা যাবে না।’
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরমান হোসেন বলেন, ‘১৯৮৭ সালে নূর হোসেন শহীদ হয়েছেন, কিন্তু ফ্যাসিবাদ নিপাত যায়নি। ২০২৪ সালেও আবু সাইদরা শহীদ হয়েছেন, কিন্তু এখনও ফ্যাসিবাদ নিপাত যায়নি। আওয়ামী লীগ অপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ নিপাত যাবে।’
তিতুমীর কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সুজন মিয়া বলেন, ‘আমাদের ভাইদের রক্তের ঋণ এখনও শোধ করতে পারিনি। এই রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করতে চাই।’
জুলাই বিপ্লবে আহত আবু বক্কর বলেন, ‘আমাদের লড়াই এখনও শেষ হয়নি। আমাদের এখনও দিল্লির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। শহীদেরা জীবন দিয়েছেন ক্ষমতার পালা বদলের জন্য না, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য।’
সমাবেশে রাজনীতি বিশ্লেষক ফয়জুল হক বলেন, ‘যত দিন শিক্ষার্থীরা থাকবে তত দিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে। মুজিববাদের কোনো ষড়যন্ত্র হতে দেওয়া হবে না।’
রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি মো. ইহসান বলেন, ‘আজকের পর থেকে সুশাসনের জন্য আর কেউ জীবন দেবে না, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত সুশাসন নিশ্চিত না হবে, রাষ্ট্র সংস্কার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব। আমরা ৭২–এর সংবিধান মানি না। এই সংবিধান বাতিল করতে হবে।’
এই ছাত্র নেতা বলেন, ‘যারা নির্বাচন বলে গলা ফাটাচ্ছেন, তাদের জানিয়ে দিতে চাই, আগে রাষ্ট্র সংস্কার। তারপর নির্বাচন।’