আব্দুল্লাহর মরদেহ বেনাপোলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে দীর্ঘ তিন মাস সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া আব্দুল্লাহর (২৩) মরদেহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। যশোরের বেনাপোল বলফিল্ড মাঠে আজ শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ১১টায় শহীদ আব্দুল্লাহর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবর স্থানে নানা-নানির কবরের পাশে দাফন করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় নিজ গ্রাম বেলাপোল পোর্ট থানার বড় আঁচড়ায় পৌঁছায় আব্দুল্লাহর মরদেহ। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। মরদেহ এক নজর দেখতে ছুটে আসে গ্রামের শতশত মানুষ।
জানাজার আগে পুলিশের একটি দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. রাজিব হাসান। জানাজায় বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের কয়েক হাজার মানুষ অংশ গ্রহণ করে।
আবদুল্লাহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। এরপর ঢাকায় সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মারা যান। তিনি বড়আঁচড়া টার্মিনাল পাড়ার দিনমজুর আব্দুল জব্বাবের ছেলে। মা মাবিয়া বেগম। তারা তিন ভাই ও এক বোন। তিনি ছিলেন সবার ছোট। তিনি সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বোনের বাসায় থাকতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড়ে বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন আবদুল্লাহ। তার কপালের ঠিক মাঝ বরাবর গুলি লাগে। এ অবস্থায় প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা তিনি রাস্তায় পড়ে থাকেন। এরপর প্রথমে তাঁকে মিটফোর্ড হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তার মাথা থেকে গুলি বের করা হয়। তবে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকলেও হাসপাতাল থেকে ১০ আগস্ট জোরপূর্বক ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে বেনাপোলের বাড়িতে নিয়ে আসেন স্বজনরা। বাড়িতে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাকে ১১ আগস্ট রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় ডাক্তাররা দ্রুত আবারও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। ১২ আগস্ট সকাল ৭টায় তাঁকে সেখানে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা মাথার ভেতরে ইনফেকশন দেখতে পান যা তরল প্লাজমার মতো গলে গলে পড়তে থাকে। আবারও তার অপারেশন করা হয়। এরপরও উন্নতি না হওয়ায় গত ২২ আগস্ট তাঁকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ গতকাল সকালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।