কামরুল ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম কলঙ্কিত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন : রিমান্ড আবেদনে পুলিশ
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে আট দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এই আদেশ দেন।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজ কামরুল ইসলামকে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়। সেসময় আইনজীবীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে কামরুল ইসলাম বলেন, সব দিন তো একরকম যায় না। এই দিন দিন না, সামনে ভাল দিন আসবে। তিনি আরও বলেন, নিউমার্কেট এলাকা আমার অধীনে না। আমি ওই এলাকার এমপিও না। এ মামলায় আমাকে ৫৬ নাম্বার আসামি করা হয়েছে। আমার নামটি হয়ত শেষ মুহূর্তে ভুলে এজাহারে লিখে দেওয়া হয়েছে। এসময় তার এ বক্তব্যের জেরে উপস্থিত আইনজীবীরা ক্ষেপে গেলে তিনি চুপ হয়ে যান। এরপরে বিচারক রিমান্ডের আদেশ দেন।
এদিকে রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা জোনাল টিমের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ
বলেন, কামরুল ইসলাম ফ্যাসিস্ট সরকারের ভোট ডাকাতির মাধ্যমে চারবারের এমপি, একবার ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও একবার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ আসামি অত্যন্ত ভয়ানক চরিত্রের অধিকারী। যা তার আচার, আচরণ, অঙ্গভঙ্গি ও কথাবার্তার মাধ্যমে প্রকাশ হত। তিনি অত্যন্ত প্রভাব প্রতিপত্তির সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। এমন কোনো অপর্কম নাই যা তিনি করেন নাই। অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার, দুর্নীতিসহ বিরোধী দলমত দমনে তিনি অগ্রণী ও আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন। তার ভয়ে তার সংসদীয় এলাকাসহ বিভিন্ন মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারতেন না।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, তিনি (কামরুল ইসলাম) আইন প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বহু নিরাপরাধ মানুষকে জেল জুলুমের মাধ্যমে নির্যাতন করতেন। এ আসামি ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম কলঙ্কিত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি ফ্যসিস্ট সরকারের বহু অপকর্মের ঘনিষ্ঠ সহচর বলে দেশে ও বিদেশে জনশ্রুতি আছে। তার গ্রেপ্তারে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরে এসেছে। এ আসামিসহ অন্যান্য আসামিদের নির্দেশে গত ১৯ জুলাই বিকেলে নিউমার্কেট থানাধীন নীলক্ষেত এলাকায় মাহফুজুর রহমান, নাসির উদ্দিন, শামীম উসমান, মো. আবু মূসা, মাঈনুদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, আবির হোসেনসহ অনেক নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা ও সাধারণ পথচারী আহত ও চিরতরে পঙ্গু হয়। আব্দুল ওয়াদুদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। প্রাথমিক তদন্তে এ আসামি মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়নের বিভিন্ন চেষ্টায় অব্যাহত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে তদন্তকার্য অব্যাহত আছে। তিনি অতিগুরুত্বপূর্ণ একজন দলীয় পলিসি বা ডিসিশন মেকার ছিলেন। তাকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটিত হবে।
এর আগে গতকাল সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাতে তাকে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। নথি থেকে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই বিকেল ৫টায় নিউমার্কেটের ১নং গেটের সামনে গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়।
নিহত ব্যবসায়ীর শ্যালক আব্দুর রহমান বাদী হয়ে গত ২১ আগস্ট নিউমার্কেট থানায় এ মামলা করেন।
কামরুল ইসলাম ঢাকা-২ আসনের একাধিকবারের সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ২০০৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।