মানুষের ধারণা সরকার নির্বাচন প্রক্রিয়া ইচ্ছাকৃত বিলম্বিত করছে : মির্জা ফখরুল
‘মানুষের ধারণা সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
‘দলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা-সার্ভভৌমত্ব রক্ষা ও ২৪ এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সভাপতি লুৎফর রহমান।
ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর হওয়া উচিত, প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন তাহলে আবার নতুন করে ভোটার তালিকা করতে হবে। আপনি প্রধান উপদেষ্টা, প্রথমেই বলে দিচ্ছেন, ভোটারের বয়স ১৭ হলে ভালো হয়। আপনি যখন বলছেন, তখন নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। এটা ইলেকশন কমিশনের কাজ, তাদের উপর ছেড়ে দিন। ১৮ বছর তো আছে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। যদি কমাতে চান, সেটা ইলেকশন কমিশন প্রস্তাব করুক। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। এভাবে না বলে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়টা আনা উচিত ছিল, এটা ভালো হতো। তাহলে কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হতো না।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘মানুষের মনে এখন বেশি করে আশঙ্কা তৈরি হবে, এটা করতে গিয়ে আরও সময় যাবে, কালক্ষেপণ হবে। মানুষের মনে ধারণা তৈরি হচ্ছে, আমার না। তাদের মনে ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে, কেন যেন এই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে।’
‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ও সচেতনভাবে দ্বিতীয়বারের মতো গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চেয়েছিল’ বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ তো, সেই আওয়ামী লীগ। যার নেতা ছিল শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে গঠন করবার নাম করে দেশটাকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিল।’
এ সময় আওয়ামী লীগের শাসন ও দুর্ভিক্ষের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভিক্ষ ও দুঃশাসন সময়টা তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ, নেতৃত্ব ছিলেন শেখ মুজিব। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে কখনোই বিশ্বাস করত না, মুখে গণতন্ত্রের কথা বলত। গুম করে হত্যা ও বিনা বিচারে হত্যা করার প্রথা প্রথম শেখ মুজিবের আমলে শুরু হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংস্কার কোনো নতুন ধারণা নয়, কেউ যদি দাবি করে আমরা (এখন যারা সংস্কার নিয়ে কথা বলছেন) সংস্কার দফা নিয়ে আসছি, এটা ভুল। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সেজন্য তো নির্বাচন বন্ধ থাকতে পারে না। দিনের পর দিন একটি অনির্বাচিত সরকার হাতে দেশ চালাতে দিতে পারি না।’
সংস্কার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সংস্কার চলছে, আমরা বলছি সংস্কার চলুক। সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন করেছে সরকার। তারা কাজ করছেন কিন্তু কাদের সঙ্গে কাজ করছে?’
যারা সংস্কার নিয়ে কাজ করছেন তাদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “একইসঙ্গে জনগণের কাছে যান, তারা কী চায় জানুন। এ সময় তিনি রাজনীতির দর্শক লেলিনের একটি প্রবাদ তুলে ধরেন, ‘দেশে যখন সংকট সৃষ্টি হবে, জনগণের কাছে যাও, জনগণ কী চায়, না চায়—সে কথা বোঝুন, বোঝার চেষ্টা করুন। ফিরে এসে সেটি নিয়ে কাজ করুন।’ আমরা এই অভিজ্ঞতাগুলোকে সরকারকে কাজে লাগাতে বলেছি। সংস্কার করেন আমাদের কোনো আপত্তি নেই। দেশের অস্থিতিশীলতা অনেকটাই কমে যাবে, যদি একটি নির্বাচিত সরকার থাকে। কারণ নির্বাচিত সরকারের পেছনে জনগণ থাকে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সংস্কার চাই, বেশি চাই। তবে দীর্ঘকাল অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকা উচিত নয়।’
দেশের সংকট বাড়ছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য এত পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, সাধারণ মানুষ চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছে না।’
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক উপদেষ্টা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। তারা রাজনীতিবিদদের মতো বক্তৃতা দিচ্ছেন, কটাক্ষ করছেন। রাজনৈতিক দল আপনাদের প্রতিপক্ষ নয়। তারা আপনাদেরকে সহযোগিতা করছে, করে যাচ্ছে। আপনারাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের কথাবার্তা বলছেন না। সহযোগিতা সেভাবে করছেন না।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আশা প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু কথা বলেই কাজ হবে না, কাজ করে দেখাতে হবে। সংস্কার তো সবাই চায়। সেই সঙ্গে শান্তি চায় মানুষ, বাঁচতে চায়।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, এনপিপির চেয়ারম্যান ড ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য খন্দকার আবিদুর রহমান, আ স ম মেজবাহ উদ্দিন ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি সাংগঠনিক সম্পাদক মীর আমির হোসেন আমুসহ অন্যান্যরা।