ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান
ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল আজ বুধবার (১ জানুয়ারি)। এদিন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে হয় আলোচনা সভা। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি ছিলেন। যোগ দেন বিএনপির অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতারা, অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতারা। এ সময় তারেক রহমান বলেন, দেশের প্রয়োজনে আরও নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটবে, এটাই গণতন্ত্রের রীতি। এই নিয়ে বিচলিত হওয়ার কোনো কিছুই নেই। উপস্থিত নেতারা তাদের বক্তব্যে যেকোনো পরিস্থিতিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে আবার চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে। যে চক্রান্তের খেলার কারণে আমাদের নেত্রীকে ছয় বছর জেলে থাকতে হয়েছে, এখনও আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে। সেই চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আশা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা (অন্তর্বতী সরকার) ন্যূনতম যে সংস্কারগুলো করা দরকার, একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা ক্ষেত্রে, যেখানে সবার অংশগ্রহণ গ্রহণযোগ্য হবে। যে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, এ সংকটের একমাত্র সমাধান হতে পারে সবার গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন। তিনি বলেন, আমরা বারবার বলছি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে আবার চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্য রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, জুলাই আগস্টের গনঅভ্যুত্থানে সফল হয়েছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের রক্তের ওপর দিয়ে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সময়ে ক্যাম্পাসে কোথাও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের থাকতে দেওয়া হয়নি। আগামী দিনে সারাদেশের ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নতুন ধারা রাজনীতি চালু করবে। কোথাও চাঁদাবাজি ও দখলবাজি থাকবে না। বক্তব্য শুরুতে ছাত্রদলের গুম-খুন ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ করেন।
স্বাধীনতার পর নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণে ভূমিকা রেখেছে ছাত্র বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, গত ১৬ বছর বিদেশ থেকে আন্দোলনে সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান। তার নেতৃত্বে আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে দেশছাড়া হয়েছেন। এখনও দেশে সামনে টুকটাক ষড়যন্ত্র করছে ভণ্ড-প্রতারকরা, বিপদ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, গনঅভ্যুত্থানে শামিল হয়েছে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ। গণ্যঅভ্যুত্থানের পর পৃথিবীর সব দেশের নির্বাচন হয়। সংস্কার বছরের পর বছর ধরে সংস্কার চলমান। তাই যারা উল্টোপাল্টা কথা বলেন, তাদের ইতিহাস পড়া দরকার।
এ সময় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার উদাহরণ দেন ড. রিপন। বলেন, গণঅভ্যুত্থান করেছে দেশের জনগণ, সুতরাং নির্বাচনের বিকল্প নেই।
অন্তর্বর্তী সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতার উদ্দেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ২৪ থেকে ২৫ পর্যন্ত এক বছর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তরুণ প্রজন্ম। গোটা দেশ তাকিয়ে আছে ছাত্রদের দিকে। কেন হঠাৎ করে মার্চ ফর ইউনিটি? আপনার তো বিএনপি মহাসচিবসহ সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐক্য করেছিলেন? জাতীয় ঐক্যর আহ্বান জানিয়ে আপনার যখন মার্চ ফর ইউনিটির কথা বলেন তখন আমাদের কষ্ট লাগে? আপনারদের শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়ার দরকার। কার স্বার্থে মার্চ ফর ইউনিটি করছেন? আমাদের বৃহত্তর স্বার্থে শেখ হাসিনার বিচার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। আমরাও ঐক্য চাই, শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার আমরাও চাই। জাতীয় ঐক্যর ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বির্নিমিত হবে।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, কেউ কেউ বলেছে আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। আরে, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। গণতন্ত্র না থাকলে সংস্কার হয় কীভাবে? দেশের জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেললে তার পরিণম ভয়াবহ হবে।
ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুর থেকে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার হাতে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আলোচনা সভায় যোগ দেন। বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা নানা রংবেরঙের ব্যাজ, টুপি-গেঞ্জি পরে ছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের বাইরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ছাত্রদলের প্রথম শহীদ চট্টগ্রাম মো. ওয়াসিম আকরাম, মো. সবুক মিয়া, আরিফুর রহমান রাসেলসহ নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্যানার দেখা গেছে।
এ ছাড়া বিগত আওয়ামী লীগের আমলে গুম হওয়া ছাত্রদলের সাবেক নেতা ইলিয়াস আলী, নুরুজ্জামান জনি, মাহাবুবুল হক বাবলু, আবু তাহের দাইয়া, সাজেদুল ইসলাম সুমন, আমিনুল ইসলাম জাকির ফিরিয়ে দেওয়া দাবিতে ব্যানার দেখা গেছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত-জনতার আন্দোলনে ছাত্রদলের নিহত ১৪২ জনের নামে তালিকার বই প্রকাশ করে সংগঠনটি। দিনটি উপলক্ষে এদিন সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানান সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করেছে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সভাপতি আবদুর মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আহসান রাজিব, সাবেক ছাত্রদল নেতা কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন প্রমুখ।