তিন সংসদের ভোটের অনিয়ম-ত্রুটি জানতে তদন্ত করছে ইসি
২০১৪ সালের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৮ সালের রাতের ভোটের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামি ভোটের কোথায় কী অনিয়ম বা ত্রুটি ছিল, তা চিহ্নিত করতে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া কী কারণে নির্বাচনব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দেশের ১০ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছে ইসি।
সম্প্রতি বাকি চার নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। এই বৈঠকে এসব বিষয়ে তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন। এতে উল্লেখ করা হয়, বিগত নির্বাচনের অনিয়ম ও ত্রুটিগুলো সনাক্ত করে প্রতিবেদন ইসি সচিবালয়ে পাঠাতে হবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত নির্বাচনগুলোর মধ্যে পড়ে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো অংশ না নেওয়ায় এক তরফা ভোট হয়, যে নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সবগুলো দল অংশ নিলেও দিনের ভোট রাতে করে ফেলে আওয়ামী লীগ সরকার। ওই নির্বাচনে বিএনপি ও শরিকরা সাতটি আসন পায়, যা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের সন্দেহকে দৃঢ় করে তোলে। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোকে বাইরে রেখে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখানো হয়। এতে টানা চারবারের মতো ক্ষমতায় আসে দলটি।
অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে ইসি সংস্কারের পর এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠন হলে বিভিন্ন মহল থেকে ওই তিন নির্বাচনে অনিয়মের কারণ খুঁজে বের করার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। এমনকি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসেও সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তা খুঁজে বের করার দাবি তোলেন।
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনি ব্যবস্থা কী কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলো এটি কমিশনকে অবগত করতে বলা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের গাফিলতি, দায়িত্বে অবহেলা, দুর্বলতা ও দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। ভবিষ্যতে যেন এমন না হয় সেজন্য আগাম সর্তক থাকতে হবে।
গত ২১ নভেম্বর দায়িত্ব নেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন। ইতিমধ্যে তারা বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমের উদ্যোগ নিয়েছেন। পাশাপাশি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সাবেক সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে। একাদশ সংসদ নির্বাচন করেছেন কে এম নুরুল হুদার কমিশন। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। অভ্যুত্থানের এক মাস পর গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো কমিশন নিজে থেকে পদত্যাগ করেছেন।