বিউটির আশার প্রদীপ নিভে গেল সড়কে

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল রুহুল ফিলিং স্টেশনের পাশে ছোট্ট একটি চায়ের দোকানের আয়ে কোনো রকমে সংসার চলে বিউটির। মানসিক প্রতিবন্ধী স্বামী ও সাত মাস বয়সী অসুস্থ সন্তানের মাঝে তার একমাত্র আশার প্রদীপ ছিল পাঁচ বছরের ইব্রাহিম। প্রতিদিনের মতো আজও দাদির সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছিল সে। তবে বালুবোঝাই ট্রলির চাপায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ গেছে শিশুটির। নিভে গেল বিউটির আশার প্রদীপ।
আজ রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের চৌড়হাস ফুলতলা স্টেডিয়াম পাড়ার সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় শিশুটির দাদি আনোয়ারা বেগমও (৬৫) গুরুতর হয়েছেন।
নিহত ইব্রাহিম প্রতীতি বিদ্যালয়ের প্লে শ্রেণির ছাত্র এবং কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল এলাকার আহসান হাবীব সোনা ও বিউটি আক্তারের ছেলে।
শত কষ্টের মাঝেও ছেলেকে প্রতীতি বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন বিউটি। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ ধূলিসাৎ হয়ে গেল। স্কুলের সামনে বেপরোয়া ট্রলির ধাক্কায় প্রাণ গেল সন্তানের।
সন্তানের নিথর দেহ বাড়িতে পৌঁছাতেই বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন বিউটি। আহাজারি করে তিনি বলেন, ‘ছেলে আমার স্বপ্ন, তাকে আমি শত কষ্টের মাঝেও ভালো স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেল!’
দুর্ঘটনার পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও অভিভাবকেরা কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। চালক পালিয়ে গেলেও বিক্ষুব্ধ জনতা বালুভর্তি ট্রলিটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়, ফলে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মো. শেহাবুর রহমান বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।’
সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যান সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাতুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসী ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
শিশু ইব্রাহিমের করুণ মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা দ্রুতগতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ ট্রলি চলাচল বন্ধ এবং রাস্তা পারাপারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।