জীবন সায়াহ্নেও লড়াই থামছে না মনিমালার

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামে বসবাস করেন ৭৬ বছর বয়সী মনিমালা পাল। এ বয়সে জীবিকার তাগিদে পায়ে চালিত ভ্যানগাড়ি চালিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে বেড়ান তিনি। মাটির তৈরি নানা আসবাবপত্র গ্রামে গ্রামে ঘুরে ফেরি করেন বৃদ্ধা মনিমালা। তিনি কখনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাননি। তাই শেষ বয়সে এসেও তাকে এতো কষ্ট করতে হচ্ছে।
জানা যায়, স্বামী আশুতোষ পাল ১৮ বছর আগে মারা গেলে স্বামীর ভিটায় আর আশ্রয় হয়নি মনিমালা পালের। পরে একই গ্রামের গনেশ পালের দেওয়া একটি ঘরে সন্তানসহ আশ্রয় নেন মনিমালা। এখানে মাটির তৈরি নানা আসবাবপত্র পুড়িয়ে তা গ্রামে গ্রামে ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন তিনি।
এভাবে কঠোর পরিশ্রম করে জমানো অর্থ দিয়ে মনিমালা পাল বিয়ে দিয়েছেন বড় মেয়ে অর্চনা পালকে। আর ছোট ছেলে সমীর পাল ভালোভাবে কথা বলতে না পারায় তাকে বাড়িতে রেখে দিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গনেশ পালের বাড়িতে বসবাস করা মনিমালা পাল বাড়ির পাশে মাটির তৈরি আসবাবপত্র প্রস্তুতের চুলা তৈরি করেছেন। নিজ হাতের তৈরি মাটির এসব আসবাবপত্র প্রতিদিন ভ্যানগাড়িতে ফেরি করার উদ্দেশ্যে বের হন তিনি। মনিমালা পালের বাড়ির কাজে সহযোগিতা করেন তার ছেলে সমীর পাল।
মনিমালা পাল বলেন, ‘কত মানুষকে বললাম, আমার জন্য কেউ কিছু করলো না বাবা। আমার ছেলেটা ভালোমতো কথা বলতে পারে না বিধায় তাকে বাড়িতে রেখে দিয়েছি। আমি এ বয়সেও প্রতিদিন ভ্যানগাড়ি নিয়ে কত গ্রাম ঘুরি তার কোনো হিসাব নাই। সারাদিন ঘুরে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ইনকাম হয় আমার।’
মনিমালা পালের প্রতিবেশী অসীম ঘোষ বলেন, ‘মনিমালার মত গরিব মানুষ আর হয়তো এখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। মনিমালা যদি সরকার থকে সুবিধা না পায়, তবে পাবে কে?’
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, ওনার ব্যাপারটা আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখবো। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।