আখের গুড়ে নেই আখের রসের ছিটেফোঁটাও!
কুষ্টিয়ার খোকসায় বেশ কয়েকটি কারখানায় কেমিকেল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ‘আখেড় গুড়’। নেই আখের রসের ছিটেফোঁটা। পবিত্র রমজানে আখেড় গুড়ের নামে কী খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
সরেজমিন খোকসা উপজেলায় দিলীপ গুড় কারখানায় দেখা গেছে, ভোক্তাদের পছন্দের আখেড় গুড় তৈরির প্রক্রিয়া। রীতিমতো চোখ কপালে ওঠার মত অবস্থা। এই কারখানায় গুড় তৈরিতে চরম ব্যস্ত অন্তত ১০জন কারিগর। কয়েকজন প্রকাশ্যে টিনের কৌটা কেটে নষ্ট-পঁচা চিটাগুড় ও মিছড়ির দলা বের করছেন। ফেলছেন পাশেই ইটের তৈরি নোংরা গর্তে। সেখানে দুজন পা দিয়ে মাড়িয়ে মেশাচ্ছে হাইড্রোজ, ফিটকিরির মত ক্ষতিকর কেমিকেল। পরে টিনে করে চুলার ওপরে থাকা গুড় জালানো পাত্রে ঢালা হয়। এরপর জালিয়ে জালিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভোক্তাদের শখের গুড়। যার মধ্যে নেই আখেড় রসের ছিটেফোঁটাও।
পবিত্র রমজান মাসে আখের গুড়ের দেশব্যপী প্রচুর চাহিদা থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খোকসা উপজেলার কয়েকটি কারখানায় প্রতিদিন তৈরি করছেন টনকে টন ভেজাল গুড়। যা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
দিলীপ গুড় কারখানার মালিক দিলীপ কুমার বলেন, আমাদের তৈরি এই গুড় একদম এক নম্বর। এই গুড় স্বাস্থ্যসম্মত। গুড়ে কোনো ক্ষতি হয় না। দেশব্যপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্ষতি হলে আমার এত গুড় চলতো না। আমাদের এই আখেড় গুড় ঢাকা ও খুলনার ল্যাবে পরীক্ষা করা আছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই। সব নিয়ম মেনে সঠিকভাবে আখেড় গুড় তৈরী করে বাজারজাত করছেন বলেও দাবী করেন তিনি।
জেলা নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সজীব পাল বলেন, আখেড় গুড়টা আখের রস দিয়ে তৈরি করার কথা। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে চিটাগুড়, হাইড্রোজ, ফিটকিরি ও এরারুট দিয়ে গুড় তৈরি করছে। এটা একেবারেই মানসম্মত না। এটা স্বস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই গুড় খেলে পাকস্থলীতে মরণব্যাধী ক্যানসারের মতো জটিল রোগ হতে পারে। এসব গুড় খাওয়ার ক্ষেত্রে ভোক্তাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শও দেন এই কর্মকর্তা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার সহকারি পরিচালক মাসুম আলী বলেন, খাদ্যে ভেজাল মিশ্রনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ভেজাল গুড় তৈরির কারখানাগুলোতেও অভিযান করা হবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।