জাতিসংঘের মহাসচিবের ৪ দিনের সফরসূচিতে যা যা আছে

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে চার দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেল ৫টার দিকে গুতেরেসকে বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট (ইকে-৫৮৬) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
ঢাকায় পৌঁছানোর পর গুতেরেসকে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এরপর তিনি রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে যান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক
আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় গুতেরেসের সঙ্গে দেখা করবেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকারবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ
পরে জাতিসংঘ মহাসচিব সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবেন। বৈঠকের পর গুতেরেস রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে কক্সবাজার যাবেন।
এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার
গুতেরেস কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম তাকে স্বাগত জানাবেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস দিনের শেষে গুতেরেসের সঙ্গে কক্সবাজারে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে যোগ দেবেন। এ সময় উভয়ে রোহিঙ্গা ইমাম ও সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ইফতারের আগে মহাসচিব ক্যাম্পের বেশ কয়েকটি সুযোগ-সুবিধা পরিদর্শন করবেন, যার মধ্যে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, লার্নিং সেন্টার, মাল্টি-পারপাস সার্ভিস সেন্টার এবং একটি পাট উৎপাদন স্থাপনা। তিনি রোহিঙ্গা যুবক ও শিশুদের সঙ্গেও কথা বলবেন। গুতেরেস সন্ধ্যায় ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ফিরে আসবেন।
ঢাকায় জাতিসংঘের ভবন পরিদর্শন
শনিবার জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায় জাতিসংঘের ভবন পরিদর্শন করবেন, যেখানে তিনি জাতিসংঘের পতাকা উত্তোলন করবেন, বাংলাদেশ-জাতিসংঘ সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী পর্যবেক্ষণ করবেন এবং জাতিসংঘের কর্মীদের সঙ্গে একটি সভায় যোগ দেবেন।
বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ার বিষয়ে গোলটেবিল বৈঠক
শনিবার বিকেলে জাতিসংঘের মহাসচিব হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপর একটি গোলটেবিল আলোচনায় যোগ দেবেন। তিনি তরুণদের সঙ্গে একটি সংলাপে অংশ নেবেন এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পরে গুতেরেস হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে একটি যৌথ মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইফতার ও নৈশভোজে
শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্মানে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করবেন।
মহাসচিবের ঢাকা ত্যাগ
আগামী রোববার গুতেরেস সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ড. খলিলুর রহমান বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাতে উপস্থিত থাকবেন। এই সফরকালে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক মর্যাদা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে রোহিঙ্গা সমস্যার মতো দেশ যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, তা তুলে ধরা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ড. ইউনূসকে লেখা এক সাম্প্রতিক চিঠিতে গুতেরেস আশা প্রকাশ করেছেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিষয়ে আসন্ন উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন নতুন করে বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং তাদের দুর্দশার ব্যাপক ভিত্তিক সমাধান বের করতে সহায়তা করবে।
চিঠিতে গুতেরেস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংগঠিত করার প্রয়াস অব্যাহত রাখবে।’
জাতিসংঘ প্রধান বলেন, তিনি তার ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপকদের বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জাতিসংঘের স্থানীয় টিমগুলোকে রাখাইনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য মানবিক সহায়তা ও জীবিকা নির্বাহের জন্য কীভাবে সর্বাধিক সহায়তা প্রদান করা যায়, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছেন।