উত্তীর্ণের ১৫ বছর পর নিয়োগ পেলেন ডা. আলীম

অবশেষে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) নিয়োগ পেলেন ডা. আব্দুল আলীম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবেদনবিদ্যা (অ্যানেসথেসিওলজি) বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন।
গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয় বলে জানিয়েছেন ডা. আলীম। নিয়োগপত্র পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার কাজে যোগ দেন তিনি।
এত বছর পর হলেও বর্তমান প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত এই চিকিৎসক। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! দীর্ঘ ১৫ বছর পর ন্যায্য অধিকার বুঝে পেলাম।
ডা. আলীম আরও বলেন, ২০১০ সালে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ বোর্ডের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেও শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তা আটকে রেখেছিল বিগত প্রশাসনগুলো। বর্তমান উপাচার্য ও প্রশাসন উদ্যোগ নেওয়ায় আমার দীর্ঘ যন্ত্রণার অবসান ঘটল। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। নতুন পদে যোগদানের আগে রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে অবেদনবিদ্যা বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছিলেন এই চিকিৎসক।
এসময় ডা. নাজমুল বলেন, শুধু রাজনৈতিক কারণে জাতিকে আমি আমার এ সেবা দিতে পারিনি। আমি চাইবো আমার মতো কেউ যেন এমন রাজনৈতিক হয়রানির শিকার না হয়।
তথ্যানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবেদনবিদ্যা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে ২০১০ সালে ছয়টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নির্বাচন বোর্ড ডা. আব্দুল আলীমকে নিয়োগের সুপারিশ করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সুপারিশপ্রাপ্ত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) আজীবন সদস্য হওয়ায় তাঁর নিয়োগ আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ডা. আলীম।
এরপর ২০১৪ সালে একই বিভাগের দুই পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বছরেই নেওয়া হয় লিখিত ও চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা। এই পরীক্ষায়ই তিনি উত্তীর্ণ হন। তবে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ২০১৫ সালে একই বিভাগে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ডা. আলীম সেই নিয়োগ পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। তবে ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর মৌখিক পরীক্ষা দিতে গেলে আচমকা ধরে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখার পাশাপাশি লাঞ্ছিত করেন আওয়ামীপন্থি কয়েকজন চিকিৎসক, এমন অভিযোগ করেন ডা. আলীম।
ওই চিকিৎসকরা তখন তাকে বলেছিলেন, পরীক্ষা দিতে দেবেন না। পরে প্রক্টর এসে উদ্ধার করলেও আর পরীক্ষা দিতে পারেননি, কোনোরকমে ফিরে যান বাসায়। এ ঘটনা নিয়ে সে সময় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর অপহরণ ও আটকে রাখার অভিযোগ এনে ২০১৬ সালে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন ডা. আলীম। আওয়ামী সরকার পতনের পর ১৮ আগস্ট উত্তীর্ণ পদে নিয়োগের আবেদন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পরও শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ডা. আলীমের নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়। তবে তার উত্তীর্ণের ফলাফল সংরক্ষিত ছিল। বর্তমান প্রশাসন সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছে। ডা. আলীম এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক।
ডা. আলীম আরো বলেন, আমি চাইব আমার সাথে যে ৫ জন পরীক্ষা দিয়ে জয়েন করেছে তাদের সম পদমর্যাদা যেন আমাকে দেওয়া হয়।
এসময় তিনি সাম্প্রতিক ২৭তম বিসিএসে আদালতের রায়ের প্রসঙ্গটিও তুলে ধরেন।