হাকালুকি হাওরে কিচিরমিচির শব্দে উড়ছে নানা পরিযায়ী পাখি

দেশের সর্ববৃহৎ হাকালুকি হাওরে বিভিন্ন বিলের পানিতে প্রতিদিনই নানা প্রজাতির শীতের পরিযায়ী পাখি খেলা করছে। কখনও ঝাঁকে ঝাঁকে কিচিরমিচির করে আকাশে উড়ছে, কখনও বিলের পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি করছে। এসব দৃশ্যের দেখা মেলে হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে যখন পানি নেমে শুধু বিলে থাকে। প্রতি মৌসুমে হাওরে পরিযায়ী পাখি ডিসেম্বর মাসে আসে। মার্চ মাস পর্যন্ত থাকে।
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া ও সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিরাট অংশ নিয়ে দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি। প্রায় ১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর আয়তনের এই হাওরে রয়েছে ছোট বড় মিলিয়ে ২৩৮টি বিল।
এর মধ্যে চাতলা বিল, পিংলা বিল, হাওর খালবিল, নাগুয়া বিলের পানিতে দেখা মেলে শীতের পাখিদের মধ্যে লেনজা হার্স, ভূতি হাঁস, চকাচকি, বেগুনী কালেম, রাজসরালী, পাতিসরালী ও শামুকখোল পাখিসহ নানা প্রজাতির পাখি।
পাখি গণনাকারী বার্ড ক্লাব সূত্রে জানা গেছে, এবছর হাকালুকি হাওরের ২৩৮টি বিলের মধ্যে ৪৫টি বিলে জরিপ শেষে সর্বমোট ৩৫ হাজার ২৬৮টি পাখি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
হাকালুকি হাওরের কয়েকটি বিল সরেজমিনে ঘুরে নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখির অবাধ বিচরণ দেখা গেছে। এদের কিচিরমিচির শব্দে বর্ণিল সুরের অপূর্ব শব্দ হাকালুকির বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। এর সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ন্ত পাখির মনোরম দৃশ্যও সেখানে আগত দর্শনার্থীদের বিমোহিত করছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও শীত মৌসুমে অর্থাৎ মার্চ মাস পর্যন্ত অন্যান্য বছরের থেকে বেশি পাখির সমাগম হবে বলে স্থানীয় হাওর পাড়ের মানুষ আশা করছেন।
জুড়ী উপজেলার বেলাগাঁও এলাকার স্থানীয় দর্শনার্থীরা মো. হানিফ বলেন, হাওরের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও নানা জাতের পাখি দেখে মন মুগ্ধ হয়ে যায়। এক শ্রেণির অসাধু পাখি ব্যবসায়ী ও শিকারি ফাঁদ পেতে ও বিষ টোপে নির্বিচারে অতিথি পাখি শিকার বন্ধ করতে পারলে হাওরে পাখির অভাব হবে না। এবছর পানি বেশি থাকায় পাখিও বেশি দেখা যাচ্ছে। মার্চ মাস পর্যন্ত পাখিগুলো হাওরে থাকে। এরপর চলে যায়।
হাকালুকি হাওরপাড়ের মজনু মিয়া বলেন, পাখির কলকাকলি ও পাখির সংখ্যা বেশি থাকায় এটি সৌন্দর্যের একটি অংশ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে পার্শ্ববর্তী উঁচু গাছে পাখিরা আশ্রয় নেয়। পাখি জমিতে বসা ও এর আনাগোনা জমিতে ভালো ফলনেরই আশীর্বাদ। তাই পাখির আনাগোনা কৃষির জন্য ভালো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ জানান, পরিযায়ী পাখি দেশের সম্পদ। ফসলের ক্ষতিকর এমন সব কীটপতঙ্গ খেয়ে এরা জীবন বাঁচায়। এদের বিষ্ঠায় জমিতে মাটির উর্বরতা বাড়ায়।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম জনান, হাওরে পরিযায়ী পাখিরা কিট-পতঙ্গ খেয়ে জীবন ধারণ করার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। হাওরে পাখি বৃদ্ধি পেলে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসলকে রোগ বালাই মুক্ত রাখে। পাশাপাশি মাছের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। পাখি যাতে কেউ শিকার করতে না পারে, সেজন্য জনসচেতনতায় চালানো হচ্ছে প্রচারণা।