শিক্ষার্থীরা মাতৃভাষায় দক্ষ হলে সহজেই বিদেশি ভাষা শিখতে পারবে : উপদেষ্টা

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, আমাদের ইংরেজি শিক্ষকের অভাব রয়েছে। ইংরেজি হচ্ছে সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ, মাতৃভাষা নয়। শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ক্লাসে শিখে, সমাজে শেখে না। কোনো শিক্ষার্থী মাতৃভাষায় দক্ষ হলে সহজেই ইংরেজিসহ বিদেশি ভাষা শিখতে পারবে। শিক্ষকের দায়িত্ব পড়াশোনার মান বৃদ্ধি করা, তাহলে অনেক সমস্যা কেটে যাবে। সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে উদ্যোগী হলে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে পারব।
শনিবার (২২ মার্চ) সকালে ময়মনসিংহের টাউন হলের তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস আয়োজিত প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, স্কুলের শিক্ষার মান অনুযায়ী সবুজ, লাল ও হলুদ রং দিয়ে র্যাংকিং বোঝানো যেতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন দৃশ্যমান। সে অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়ছে না, বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক স্কুল ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়া সম্ভব ছিল না। এখন কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা হয়েছে, মানুষ স্বাধীন-তারা কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসায় শিশুদের পড়াচ্ছে। আমরা প্রাথমিকে বিনা বেতনে পড়াচ্ছি, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দিচ্ছি, উপবৃত্তি দিচ্ছি—তারপরও অভিভাবকরা তাদের শিশুদের পয়সা খরচ করে অন্য স্থানে কেন পড়াচ্ছেন? আমাদের প্রাথমিকের শিক্ষার অবকাঠামো ভালো, শিক্ষকরা মানসম্পন্ন, পড়াশোনায় অগ্রসর, বেতন কাঠামো মোটামুটি ভালো, চাকরির নিশ্চয়তা আছে। অন্যসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে কম। তারপরও অভিভাবকরা কেন তাদের শিশুদের অন্য বিদ্যালয়ে পড়াবেন? প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সমস্যা কোথায়? কীভাবে উন্নয়ন করতে পারি—সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত আশা করছি।
ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, মানসম্মত শিক্ষা সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমাদের লক্ষ্য শিশুদের সক্ষম করে তোলা। শিক্ষকরা শিশুদের মুখস্থ না করিয়ে তারা যেন মাতৃভাষায় বলতে, পড়তে, লিখতে ও গণিত করতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। যদি শিশুরা পারে তাহলে বুঝবেন আপনি সর্বোচ্চ করে দিয়েছেন। এরপর সে নিজে নিজেই সর্বোচ্চ পর্যায়ে লেখাপড়া করতে পারবে। প্রধান শিক্ষক তার স্কুলের শিক্ষার মানোন্নয়নে টার্গেট ঠিক করবেন। শিশুদের টার্গেট সে যেন মাতৃভাষায় লিখতে পড়তে বলতে পারে, গণিত করতে পারে, কিছুটা ইংরেজি পারে। আমরা সহায়তা করব।
বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদের সভাপতিত্বে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা প্রশাসক মফিদুল আলম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগের বিভাগীয় উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বক্তব্য দেন।
মতবিনিময় সভায় প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সুপার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর, সহকারী ইন্সট্রাক্টর ও জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকগণ অংশ নেন।