সঞ্চয়পত্রের নামে প্রতারণা : লক্ষ্মীপুরে ৭ নারীর ৩৪ লাখ টাকা খোয়া

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে সরকারি ডাকঘরে সঞ্চয়পত্র খোলার নামে প্রতারণার মাধ্যমে ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক পোস্টমাস্টার জসিম উদ্দিনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (রামগঞ্জ) আদালতে ভুক্তভোগী ফেরদৌসি আক্তার বিউটি বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী ফেরদৌসি আক্তার বিউটি জানান, তিনিসহ সাতজন নারী গ্রাহক ডাকঘরে সঞ্চয়পত্র কিনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন পোস্টমাস্টার জসিম উদ্দিন ও তার সহযোগী আব্দুর রহিম তাদের সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য ব্যাংক এশিয়ায় হিসাব খুলতে বলেন। তাদের কথামতো, ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে ভুক্তভোগীরা ব্যাংক এশিয়ায় এজেন্ট উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেনের কাছে মোট ৩৪ লাখ টাকা জমা দেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অভিযুক্তরা তাদের সরকারি সঞ্চয়পত্রের কথা বলে ব্যাংক এশিয়ায় হিসাব খুলতে বাধ্য করেন এবং তাদের কাছ থেকে টাকা জমা নেন। প্রথম কয়েক মাস তারা লভ্যাংশ পেলেও, পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তারা বিষয়টি জানতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে বুঝতে পারেন।
মামলার আসামিরা হলেন- রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘরের সাবেক পোস্টমাস্টার জসিম উদ্দিন, ব্যাংক এশিয়ার চ্যানেল ব্যাংকিং ডিভিশনের জেলা ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্যা, ব্যবসায়িক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন, রামগঞ্জ উপজেলা ডাকঘরের সাবেক কর্মচারী আব্দুর রহিম, এজেন্ট ব্যাংকের উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন, তার মেয়ে রুকাইয়া হোসেন ঋতু ও আত্মীয় মনির হোসেন। এদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন বর্তমানে একটি চেক জালিয়াতির মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
অভিযুক্ত পোস্টমাস্টার জসিম উদ্দিন বলেন, আনোয়ারকে আমি কোনোভাবেই সমর্থন করতাম না। কাউকেই আমি তার কাছ হিসাব খুলতে বলিনি। আনোয়ারকে সমর্থন না করায় তখন তিনি আমার নামে স্থানীয় এমপির কাছে অভিযোগ দেয়। এছাড়া আমি তার এজেন্ট ব্যাংকের চেক গ্রহণ করতাম না। আমি সরাসরি ব্যাংকের চেক দিতে বললে তিনি দিতেন না। পরে আমি ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের তখনকার রামগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপককেও বিষয়টি জানিয়েছি। আমার ধারণা ছিল আনোয়ার প্রতারণা করবে।
অভিযোগের বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার চ্যানেল ব্যাংকিং ডিভিশন জেলা ব্যবস্থাপক নেয়ামত উল্যার বলেন, আনোয়ার পোস্ট অফিসের উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি সেখানে বসেই সরকারি সঞ্চয়পত্রের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন। ওই টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। আমাদের ব্যাংকের কোনো রশিদে কেউ কোনো টাকা জমা দেয়নি। ভুক্তভোগীদের হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশের পরিমাণে প্রতিমাসে তিনি টাকা জমা দিতেন। বিষয়টি সন্দেহ হওয়ায় তদন্ত করে প্রতারণার সত্যতা পাই। তার বিরুদ্ধে আমি বাদী হয়ে একটি মামলা করেছি। ওই মামলায় তিনি কারাগারে আছেন।
আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল মামলাটি আমলে নিয়ে রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এ ঘটনায় এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রামগঞ্জ থানার ওসি আবুল বাশার জানান, আদালতের নির্দেশ হাতে পেলেই তারা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।