ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব
আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।
একই সঙ্গে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার সর্বোচ্চ করহার কমানোর প্রস্তাব করেছে।
আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
রাজধানীর সেগুনবাগিচার রাজস্ব ভবন সম্মেলনকক্ষে আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা রয়েছে। বিসিআই সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু আগামী বাজেটে এর সীমা এক লাখ টাকা বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেন।
এ ছাড়া নারী করদাতা ও ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা, প্রতিবন্ধী করদাতাদের জন্য তিন লাখ ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে চার লাখ ২৫ হাজার এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা চার লাখ ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেন বিসিআই সভাপতি।
করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে বিসিআই সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এই বিবেচনায় করমুক্ত আয়ের সীমা পুনর্নির্ধারণ করার দরকার।’ তিনি নতুন ভ্যাট আইনে মোট বিক্রয় মূল্যের পরিবর্তে নির্ধারিত মূল্য সংযোজন হারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেন।
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ১৫ শতাংশ হারে মোট বিক্রয়মূল্যের ভ্যাট আদায় করলে ৮৫ শতাংশ ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই মোট বিক্রয়মূল্যের পরিবর্তে নির্ধারিত মূল্য সংযোজন হারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করতে পারেন। তিনি নতুন ভ্যাট আইনে বার্ষিক টার্নওভার করের ঊর্ধ্বসীমা ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেন।
এমসিসিআইর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গোলাম মঈনুদ্দীন ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণি করদাতার ক্ষেত্রে আয়করের সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ, যা অধিক বলে প্রতীয়মান হয়। আমরা ব্যক্তিশ্রণির করদাতার সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি।’
এমসিসিআই সভাপতি তাঁর লিখিত বক্তব্যে রাজস্ব প্রশাসনকে ব্যবসায়ীদের ওপর অধিক হারে করের বোঝা না চাপিয়ে করের আওতা সম্প্রসারণের পরামর্শ দেন।
আগামী বাজেটের জন্য ব্যবসায়ীদের কর সংক্রান্ত এসব প্রস্তাবনার জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এমন কোনো বাজেট করব না, যাতে কেবলমাত্র ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। সবার কাছ থেকে আমরা রাজস্ব আহরণ করতে চাই। তাই ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে রাজস্ব কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে।’ বিভিন্ন উদ্ভাবনীমূলক কার্যক্রমের ফলে করের আওতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিসিআই ও এমসিসিআই নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এনবিআর আজ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু করেছে। এটি চলবে ৪ মে পর্যন্ত।
মোট ২১টি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের শুল্ক ও কর সংক্রান্ত বিষয়ে মতবিনিময় করবে এনবিআর।