হরতাল-অবরোধ নিষিদ্ধ করার দাবি ব্যবসায়ীদের
চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিরসনের দাবিতে জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তায় নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আইন করে অবরোধ-হরতাল বন্ধ করা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঋণের সুদ মওকুফের আহ্বান জানান তাঁরা।
আজ রোববার বেলা ১২টায় রাজধানীতে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সারাদেশে বিভিন্ন ব্যবসা সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সামনে রাস্তায় ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেন। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয়। তাঁরা ১৫ মিনিট এ কর্মসূচি পালন করেন।
কর্মসূচি চলাকালে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ আইন করে হরতাল-অবরোধ নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। তিনি জানান, হরতাল-অবরোধের কারণে বিভিন্ন খাতে এ পর্যন্ত ৭৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
নাশকতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঋণের সুদ মওকুফ করার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঋণের সুদ মওকুফ করতে হবে, সুযোগ দিতে হবে ঋণ পুনঃতফসিলের।’
এফবিসিসিআই ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি আনিসুল হক, এ কে আজাদ, মীর নাসির হোসেন, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি খালেদ হোসেন, রোকেয়া আফজাল রহমান।
গত ২ ফেব্রুয়ারি ‘দেশ বাঁচাও, অর্থনীতি বাঁচাও’ স্লোগান নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ।
গত ৫ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ ও হরতোলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে দেশ। অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেন, ‘আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ চাই। সুষ্ঠুভাবে ব্যবসার পরিবেশ চাই। আজ শিল্প জ্বলছে, অর্থনীতির রক্ত ঝরছে। সহিংসতামুক্ত পরিবেশ চাই। সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাই।’
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবনের সামনে ‘সবার উপরে দেশ; দেশ বাঁচাও, অর্থনীতি বাঁচাও’ ব্যানার সামনে রেখে অবস্থান করেন বিজিএমইএ, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সিমতি, দোকান মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারিরা।
দেশের সর্বস্তরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক, কর্মচারি ও সংশ্লিষ্টরা এ কর্মসূচিতে অংশ নেন:
এফবিসিসিআইর আহ্বানে নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রেস ক্লাব চত্বরে ৪০টি ব্যবসায়ী সংগঠন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
বাংলাদেশ নিট ওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মঞ্জুরুল হক এ কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক জিএম ফারুক ও সংগঠনের অন্য নেতারা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, এক মাস ধরে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছি না। টানা অবরোধ-হরতালে শুধু নিট শিল্পে ১০ হাজার কোটি টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে।
খুলনা ব্যুরো থেকে প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবু তৈয়ব জানিয়েছেন, নগরীর ডাকবাংলা মোড়ের অদূরে চেম্বার ভবনের সামনে সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে নগরীর বিভিন্ন মার্কেট, শপিং মল ও বাজারের ব্যবসায়ীরা মানববন্ধনে কমসূচীতে অংশ নেন। মানববন্ধনে অংশ নেন খুলনা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি কাজী আমিনুল হক, সহ-সভাপতি শরীফ আতিয়ার রহমান, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, পরিচালক গোপী কিষাণ মুন্ধড়া, মফিদুল ইসলাম টুটুল প্রমুখ।
ময়মনসিংহ থেকে প্রতিনিধি আইয়ুব আলী জানান, শহরের শহীদ ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে মানববন্ধনে অংশ নেন ময়মনসিংহ চেম্বর অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু, পরিচালক প্রদীপ ভৌমিক, শংকর শাহা, এড মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, প্রকৌশলী মুসলেম উদ্দিন প্রমুখ।
নেত্রকোণা থেকে প্রতিনিধি ভজন দাস জানান, শহরের ছোট বাজার, বড় বাজারের সামনে সড়কে মানববন্ধনে চেম্বার অফ কমার্সসহ ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। চেম্বার সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, চেম্বার পরিচালক এইচ আর খান পাঠান সাকিসহ বক্তারা অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের দাবি জানান।
জামালপুর প্রতিনিধি শফিক জামান জানান শহরের তমালতলা এলাকায় জামালপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজ আহ্বানে মানববন্ধনে ব্যবসায়ীরা অংশ নেয়। এতে এফবিসিসিআই-এর পরিচালক রেজাউল করীম রেজনু বক্তব্য রাখেন।
মাদারীপুর প্রতিনিধি এম.আর. মুর্তজা জানান, পুরান বাজার এলাকায় কর্মসূচিতে মাদারীপুর চেম্বার অফ কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পিরোজপুর প্রতিনিধি রশিদ আল মুনান জানান, চেম্বার অফ কমার্স ভবনের পাশে প্রধান সড়কে এ কমসূচি হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুর চেম্বার সভাপতি ও পৌর মেয়র মো. হাবিবুর রহমান মালেক, সিনিয়র সহ-সভাপতি আতাউর রহমান শেখ আলম, সহ-সভাপতি গোলাম মাওলা নকিব।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি হাসিবুর রহমান হাসিব জানান, জেলার প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সহিংসতা বন্ধ করে অর্থনীতির চাকা চালু রাখার দাবি জানান তারা।