মোংলায় পেঁয়াজের দাম এক লাফে কেজিতে বাড়ল ৮০ টাকা!
মোংলায় এক রাতের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০ টাকায়। নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীরা আগের দামে কেনা পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন।
আজ শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে হঠাৎ করে মোংলার বাজারে পেঁয়াজের দামে এমন ঊর্ধ্বগতির চিত্র দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়, সেই পেঁয়াজ রাতের ব্যবধানে শনিবার সকালে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ১৮০ টাকা পর্যন্ত।
শনিবার সকালে বাজারে এসে পেঁয়াজের দাম শুনে ক্রেতাদের চোখ যেন কপালে উঠে গেছে। বাড়তি দাম শুনে অনেকে পেঁয়াজ না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন, আবার কেউ সাধ্যমতো স্বল্প পরিমাণ পেঁয়াজ কিনেছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির হঠাৎ এত দাম বাড়ায় ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। দাম দর নিয়ে বাকবিতণ্ডাও ঘটছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে। ক্রেতারা বলেছেন, এখন নতুন পেঁয়াজ উঠছে এবং আরও উঠবে, তাহলে দাম বাড়বে কেন?
পেঁয়াজ কিনতে আসা দিনজুর আলী আকবর বলেন, ‘১১০ টাকার পেঁয়াজ এখন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ কীভাবে এত বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে খাব। অন্যান্য জিনিসের দামও বেশি, আমাদের পরিবার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’
অপর ক্রেতা শ্রমিক হালিম সরদার বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) আধা কেজি পেঁয়াজ কিনেছি ১১০ টাকা দরে। আজ শনিবার বাজারে পেঁয়াজ কিনতে এসে দেখি ২০০ টাকা কেজি। আজ (শনিবার) আর পেঁয়াজ কিনতে পারিনি।’
ক্রেতা ফরিদ বলেন, ‘১১০ টাকা টাকার পেঁয়াজ এখন ১৫০ টাকা চাইছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, আমদানি বন্ধের কারণে নাকি দাম বেড়েছে।’
ক্রেতা গৃহিণী মানসুরা বেগম বলেন, ‘১০০ টাকা দিয়ে যে পেঁয়াজ কিনেছি, তা এখন ১৪০ টাকায় কিনছি। তা-ও আবার ভালো না, বেশির ভাগই নষ্ট, খাওয়া যাবে কি না জানি না। আর ভালোটার দাম আরও বেশি, সেটা ১৬০ টাকা চাইছে।’
ক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘১০৫ থেকে ১১০ টাকার পেঁয়াজ এখন ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা হয়েছে, যা মূলত আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে।’
আর বিক্রেতারা বলেছেন, ‘বর্ডার বন্ধ, সরবরাহ কম, তাই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। খুলনার মোকামে পেঁয়াজ নেই। যা আছে তারও দাম বেশি, আমরা কী করব?’
ব্যবসায়ী রহিম হাসান বলেন, ‘দাম বাড়ায় পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছি না। ক্রেতারা বলছেন, ডাকাতি করছি নাকি! খুলনায় পেঁয়াজের কেজি ১৬০ টাকা, আর খরচ মিলিয়ে আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ১৭০ টাকায়।’
পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার খুলনার মোকামে খোঁজ নিলে মহাজনেরা বলেছেন, পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত থেকে নাকি পেঁয়াজ আসা বন্ধ রয়েছে। সেই কারণে দাম বেড়েছে। দাম বাড়ায় গতকাল শুক্রবার খুলনা থেকে মোংলায় কোনো পেঁয়াজ আসেনি। ফলে বাজারেও পেঁয়াজ কম, তাই দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা আগের পেঁয়াজই ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।’
এদিকে, বাজারে পেঁয়াজ থাকলেও দাম বাড়ার অজুহাতে সেগুলো গোডাউনে মজুদ রেখে কম বের করে বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা এমন অভিযোগ স্থানীয় ক্রেতা সাধারণের। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাড়তি দামের পেঁয়াজ এখনও মোংলার বাজারে আসেনি, কিন্তু ব্যবসায়ীরা আগের কম দামে কেনা পেঁয়াজ এখন খামখেয়ালীভাবে ক্রেতাদের জিম্মি করে চড়া দামে বিক্রি করছেন।
এক রাতের ব্যবধানে নানা অজুহাতে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ঘটনাটি সিন্ডিকেটের কারসাজি উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এইচ এম দুলাল। তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখেই হয়তো সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই একটি চক্র এমন কারসাজি করছেন। এটি সরকারের খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
পেঁয়াজের দামের এ ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। পেঁয়াজসহ সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ক্রেতা সাধারণ।