এবারের রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম তুলনামূলক কম

বিগত বছরের তুলনায় এবারের রমজানে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে। এ বছর বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, বিশেষ করে কাঁচাবাজার ও মুদিখানার জিনিসপত্র সুলভ ও সাশ্রয়ী মূল্যে পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
আজ বুধবার (৫ মার্চ) সকালে কারওয়ানবাজার, খিলগাঁও তালতলা বাজার, ফকিরাপুল বাজার, মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচাবাজার, শান্তিনগর বাজারসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচাবাজার ঘুরে বাসস প্রতিবেদক দেখতে পেয়েছেন, ক্রেতারা সাধারণত তাদের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও পণ্য পাচ্ছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে।
সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কঠোর বাজার তদারকিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে চিনি, ডাল, খেজুর, পেঁয়াজ, শসা, আলু, টমেটো, ডিম, রসুন, কাঁচামরিচ, শুকনো মরিচ, আদা ও ইসবগুলের ভুসিসহ বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ২০২৪ সালের রমজানের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।
পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা নিশ্চিত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ওপর থেকে ভ্যাট তুলে নিয়েছে।
এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে সরিষার তেল, ময়দা, সুজি, মসুর ডাল, এলপিজি, বিস্কুট, লবণ ও গরম মশলা।
এই পণ্যগুলোর উৎপাদন পর্যায়ে এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক পর্যায়ে ভ্যাট রেয়াত দেওয়া হয়েছে।
এনবিআর খেজুর, চাল, ডাল, চিনি ও তেলের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি শুল্ক শূন্যে নামিয়ে এনেছে।
সরকারি পদক্ষেপের প্রশংসা করে খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা আবু সুফিয়ান বলেন, সরবরাহ প্রচুর থাকায় বেশিরভাগ মুদি পণ্যের দাম সন্তোষজনক।
আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি সব সময় আমার বাড়ির কাছে তালতলা বাজার থেকে কেনাকাটা করি। গত কয়েক বছরের তুলনায় এই রমজানে সবজির দাম কম থাকায় সবাই স্বস্তি পেয়েছে।’
সুফিয়ান আরও বলেন, মাছ, মাংস ও মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
শহরের বিভিন্ন বাজার পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকা, সোনালি ৩০০-৩১০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৫০-৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে- যা গত বছরের তুলনায় যথাক্রমে ১০-৩০ টাকা কম।
খাসি (মাংস) প্রতি কেজি প্রায় ১১০০ টাকা ও গরুর মাংস ৭৫০-৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে- যা আগের বছরের তুলনায় ৩০-৫০ টাকা কম।
অন্যদিকে, চিনি প্রতি কেজি ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে- যা গত বছর ছিল ১৪০-১৫০ টাকা।
সাধারণ খেজুরের দাম ২২০-২৫০ টাকা থেকে কমে ১৮০-২০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে মাঝারি মানের ও প্রিমিয়াম মানের খেজুর যথাক্রমে ৪৫০-৮০০ টাকা ও ১,০০০-১,৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে—যা গত বছরের তুলনায় ৩০-২০০ টাকা কম।
স্থানীয় পেঁয়াজ এখন ৪০-৪৫ টাকায় প্রতি কেজি পাওয়া যাচ্ছে–যা গত বছর ১০০-১২০ টাকার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
আলু ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে- যা গত বছর ছিল ৩০-৪০ টাকা ।
এছাড়াও, শীতকালীন সবজির দাম গত রমজানের তুলনায় ৫-২০ টাকা কেজিতে কমেছে।
মতিঝিল এজিবি কলোনির কাঁচাবাজারের মুরগি বিক্রেতা মহসিন বলেন, সরকারের যথাযথ ও সক্রিয় তদারকি কার্যক্রমের কারণে দাম আগের বছরের তুলনায় কম।
মহসিন আরও বলেন, ‘আমরা এখানে ক্রয়-বিক্রয় করি। খুব বেশি লাভ করার সুযোগ নেই। কৃষকরাও মোটা অঙ্কের মুনাফা পাচ্ছে না। মূলত, বড় সিন্ডিকেট মুরগির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। যারা এক দিন বয়সী বাচ্চা উৎপাদন করে ও মুরগির খাবার দেয়, তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার যদি সিন্ডিকেটগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাহলে মুরগির দাম আরও কমার সুযোগ রয়েছে।’
স্থানীয় রুই (১.৫ থেকে ২ কেজি জীবিত) ৩০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আমদানি করা রুই (২ থেকে ৩ কেজি) ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ফকিরাপুল বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রফিক মিয়া বলেন, বাজারে মাছের সরবরাহ স্বাভাবিক। তবে রমজান আসার সঙ্গে সঙ্গে মাছের চাহিদা বেড়েছে।
তালতলা বাজারে সেনবাগ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ তারেক বলেন, সরবরাহ প্রচুর হওয়ায় বেশিরভাগ মুদি পণ্যের দাম সন্তোষজনক।
মতিঝিল এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এ বছর পেঁয়াজ, আলু, টমেটো, কাঁচা মরিচ ও ডিমের দাম ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত। সরকারের কঠোর নজরদারি পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল করতে ভূমিকা রেখেছে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদার করেছে। সরকারের তিনটি নিবেদিতপ্রাণ দল ঢাকা মহানগরজুড়ে সর্বক্ষণ বাজার পর্যবেক্ষণ করছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জেলা ও ঢাকা মহানগর প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে পণ্য বাজার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এ ছাড়া, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) বাজারের ওপর কড়া নজর রাখছে, যাতে অতিমুনাফার জন্য অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুদদাররা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে অস্থির ও অস্থিতিশীল করে তুলতে না পারে।