‘রাজকীয়ভাবে আলো ছড়াচ্ছে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ’

‘রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা আগামীর বাংলাদেশ। পঁচিশ বছর আগে একটি বৃক্ষরোপণ করা হয়। এ বৃক্ষ এখন ছায়া দিচ্ছে, ফল দিচ্ছে। শিক্ষক এবং পরিচালনা পর্ষদের সার্বিক প্রচেষ্টায় এ প্রতিষ্ঠানের আলো ছড়িয়েছে রাজকীয়ভাবে। আর রাজকীয় ছাত্রছাত্রীরা আমার সামনে রয়েছে। ভবিষ্যতে এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে দেশ-বিদেশে।’
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘দেশসেরা প্রতিষ্ঠানে এসে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। শৃঙ্খলা, ফলাফলের জন্য এ প্রতিষ্ঠান সারা দেশের কাছে ঈর্ষণীয়। ভবিষ্যতে এ প্রতিষ্ঠান আরো আলোর দ্যুতি ছড়াবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। এখানকার শিক্ষকদের শ্রম ও আন্তরিকতার কারণে ছাত্রছাত্রীরা মেধাবী হয়ে উঠছে।’
অনুষ্ঠানে সকালে অতিথিদের গার্ড অব অনার দিয়ে বরণ করা হয়। এরপর সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলম প্রতিষ্ঠানটির পরিচিতি ও সাফল্য তুলে ধরেন। অতিথিদের বক্তব্য শেষে সাবেক অধ্যক্ষ ও অতিথিদের ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এরপর ছাত্রছাত্রীরা গান, নৃত্য, অভিনয় ও আবৃত্তি পরিবেশন করে। এরপর কাটা হয় দর্শনীয় একটি কেক।
মেয়র আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, ‘শুধু জিপিএ ৫ পেলে চলবে না; মানুষ হতে হবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যত ধরনের কারিকুলাম রয়েছে, সব ক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে হবে। এ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ২৫ বছরে পদার্পণ করেছে। এখানে আমি আসতে পেরে গর্ববোধ করছি।’
মেয়র আতিকুল বলেন, ‘গরিব-দুঃখী মানুষর পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষের সেবা করতে হবে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে অদম্য মেধাবীরা বের হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরাই রাজনীতিবিদ, আমলা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে। দেশের নেতৃত্ব তাদের হাতে আসবে। আমি বলব, এসব ছাত্রছাত্রীকে বড় বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। কর্মের মাধ্যমে সারাবিশ্বে তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে, সেই প্রত্যাশা করি।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি। সেইসঙ্গে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যাঁর কল্যাণে বাংলাদেশ নামক একটি মানচিত্র পেয়েছি। কারণ, দেশ স্বাধীন না হলে এখানে আসার সুযোগ হতো না। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। যারা দেশকে গড়বে (ছাত্রছাত্রীরা), তারাই আমার সামনে দাঁড়িয়ে। আমাদের দেশের এ জনসংখ্যাকে কীভাবে জনসম্পদে রূপান্তর করা যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশকে ভালোবেসে জীবন দিয়েছে, শহীদদের এ ত্যাগ দেশপ্রেম। ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের গড়তে হবে। দুর্নীতিবিরোধী যতই অভিযান চালাক, কোনো লাভ হবে না, যদি আমরা সংশোধন না হতে পারি। দেশ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে; ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যাবে। তোমরা বড় স্বপ্ন দেখো, স্বপ্ন বাস্তবে কীভাবে উজ্জ্বল হবে, তা দেখে যেতে চাই।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলম বলেন, ‘১৯৯৪ সালে এ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে ১৬৮ জন ছাত্রছাত্রী দিয়ে শুরু হয়। বর্তমানে সাত হাজার ২১৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ২২৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। চলতি বছর জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি তিনটি ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিষ্ঠান ফলাফলের দিকে সারা দেশে প্রথম হয়েছে। বিগত বছরে প্রথম, কখনো দ্বিতীয় বা তৃতীয় হয়েছে। আমাদের এ সাফল্যের পেছনে সম্মানিত শিক্ষক, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির চেষ্টা, পরামর্শই কাজ করেছে। শুধু ফলাফল নয়, খেলাধুলা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সব ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; আমরা ও এ উন্নয়নের অংশীদার হতে চাই। এখানে উপস্থিতির জন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’
অনুষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সদস্য সহকারী অধ্যাপক আবু রায়হান বলেন, ‘রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ২৫ বছরে রজতজয়ন্তী পার করছে। অল্প সময়ে এ প্রতিষ্ঠানটি শৃঙ্খলা, শিক্ষাক্ষেত্রে অভাবনীয় সফলতা দেখিয়েছে। দেশের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি রোলমডেলে পরিণত হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে ছয় হাজার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীর পদচারণায় অভূতপূর্ব মিলনমেলায় পরিণত হয়। অনুষ্ঠানে সকালবেলায় অতিথিদের বক্তব্যের পর ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এরপর ছাত্রছাত্রীদের গান, নৃত্য, অভিনয় ও আবৃত্তি পরিবেশনা সবাইকে মুগ্ধ করে।

বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানটির এমন সফলতায় গর্বিত। এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সিফাত বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র হিসেবে আমি গর্বিত। রজতজয়ন্তীতে থাকতে পেরে অনেক আনন্দিত।’ একইভাবে অনূভূতি প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া, অর্পিতাকুণ্ড, মেঘলা সিমিন। সবার চোখেমুখে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস।
মেঘলা এইচএসসির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। তিনি বলেন, ‘এখানে সফলতার মূল কারণ শৃঙ্খলা এবং শিক্ষকদের আন্তরিকতা। শুধু ফলাফল নয়, ভালো মানুষ হওয়ায় আমাদের লক্ষ্য।’
অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সাবেক শিক্ষার্থী শেখ নাজমুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শিক্ষার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলামে অনেক এগিয়ে। পড়ালেখার পাশাপাশি তারা সব ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। দ্বিতীয় পর্বে ব্যান্ডসংগীত শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর গান পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।