সমাজে নিবেদিত নারীদের জন্য ‘সর্বজয়া সম্মাননা-২০২০’
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/12/29/projapotir-adda-photo-1.jpg)
তৃতীয়বারের মতো গত ২৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ৯৬৯৮ ব্যাচের নারী সদস্যদের বাৎসরিক মিলন মেলা, ‘প্রজাপতির আড্ডা সিজন-৩’। এই অনুষ্ঠানের আয়োজনে ছিল রঁদেভু ৯৬৯৮ ফাউন্ডেশনের উইমেন্স অ্যান্ড চিলড্রেন্স উইং ‘সর্বজয়া’।
এদিন নীল রঙে সেজে হাসি-আনন্দে মেতে উঠেছিল ৯৬৯৮ ব্যাচের নারী সদস্যরা। সব রকম কোভিড-১৯ সতর্কতা মেনে, তাপমাত্রা মেপে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ডিসইনফেক্ট স্প্রে ব্যবহার করে, মাস্ক প্রদান করে সবার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয় এবং ইভেন্টের সিগনেচার গিফট দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্যের পর সবার মঙ্গল কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। বিজয়ের মাস উপলক্ষে উপস্থিত সবাই সমবেতভাবে জাতীয় সংগীত গান। এরপর একে একে চলে আবৃত্তি, গান, নাচ, ফ্যাশন রানওয়েসহ মজার সব আয়োজন। আর সঙ্গে চলে ফটোশুট।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/12/29/projapotir-adda-photo-2.jpg)
দুপুরের খাবারের পর শুরু হয় জেনেরাল ড্র ও র্যাফেল ড্র। এতে ছিল আকর্ষণীয় পুরস্কার। বিকেলে প্রজাপতির আড্ডার সিগনেচার সমুদ্র থীম কেক কাটেন সবাই।
এদিনের আয়োজনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল ‘সর্বজয়া সম্মাননা-২০২০’। ৯৬৯৮ প্লাটফর্মের অলরাউন্ডার নারীরা, যাঁরা নিজেদের কাজের জায়গায় পরিশ্রমী ও নিবেদিত, ৯৬৯৮ গ্রুপের বন্ধুদের যে কোনো প্রয়োজনে হাসিমুখে সাহায্য করে যাচ্ছেন সর্বদা, আর সমাজের প্রতিও একই ভাবে দায়িত্বশীল, তাঁদের মধ্য থেকে যে কজন পেয়েছেন এ বছরের সর্বজয়া সম্মাননা তাঁরা হলেন—লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও শিশু বিশেষজ্ঞ নূরে ইশরাত নাজমী, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. শাওলী সরকার, নৈসর্গিকের উদ্যোক্তা কাজী শবনম ও রেড বিউটি সেলুনের নির্বাহী পরিচালক আফরোজা পারভীন।
নূরে ইশরাত নাজমী
নাজমীর জন্ম ফেনী শহরে। ছোটবেলা কেটেছে চট্টগ্রামে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করে ২০১৪ সালে এফসিপিএস পর্ব সমাপ্ত করে শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে নিয়োজিত আছেন। গবেষণার শখ থেকে দেশ-বিদেশে প্রকাশিত হয়েছে তার অনেক আর্টিকেল। গান গাওয়া, মাউথ অর্গান বাজানো, পোর্ট্রেট ড্রয়িং, ফটোগ্রাফি, আবৃত্তি ইত্যাদি তার শখের তালিকায় আছে। এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী নাজমী একই সঙ্গে দায়িত্বশীলতা ও উচ্ছ্বলতার দারুণ বিন্যাসে উজ্জ্বল।
ডা. শাওলী সরকার
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেছেন শাওলী সরকার। ২০১৩ সালে এফসিপিএস করে শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ে। বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু নিউরোলজি বিভাগে। গ্ৰুপের যে কোনো বন্ধুর প্রয়োজনে শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে যে কোনো দরকারে সবার ভরসার জায়গা শাওলী। শিশু নিউরোলজি ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট নিয়ে আরো কাজ করার ইচ্ছা রাখেন তিনি। এই বিষয়ে দেশ-বিদেশের কনফারেন্সগুলোতে রয়েছে তাঁর সফল পদচারণা। এক ছেলে ও এক মেয়ের মা হলেও শাওলী সব বাচ্চাদের প্রিয় ডাক্তার আন্টি।
কাজী শবনম
ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিস অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) থেকে কোয়ালিফাইড চার্টার্ড সেক্রেটারি হিসেবে পাস করার পর প্রশাসনিক কাজে জড়িত ছিলেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন তিনি। তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি নৈসর্গিক নামক ব্যবসা উদ্যোগের সত্ত্বাধিকারী ও মূল ডিজাইনার। নিজের গড়া এই প্রয়াসের মাধ্যমে শবনম রিকশা পেইন্ট ও অন্যান্য হারিয়ে যাওয়া দেশীয় শিল্পগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। তিনি ডব্লিউইবিডি-এর লিড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স পদে আছেন ও বিডব্লিউসিসিআই-এর সদস্য। শখের তালিকায় আছে লেখালেখি, আবৃত্তি ও বেকিং করা। দুই ছেলে তাঁর প্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস।
আফরোজা পারভীন
আফরোজা পারভীনের লেখাপড়া অ্যাকাউন্টিংয়ে। সাজসজ্জার শখে ১০ বছর বয়স থেকেই পরিচিত বউ সাজানো শুরু করে। ২০০৭-এ শুরু হয় মেক-আপের জগতে তার প্রফেশনাল পদচারণা। ২০০৯-এ প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর নিজস্ব ভেনচার রেড বিউটি স্যালুন। রূপচর্চাকে নতুন মাত্রা দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন আফরোজা। একই সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন মিডিয়া, কর্পোরেট ও সামাজিক নানান কাজে। আছেন বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স ও নতুন প্রজন্ম উন্নয়ন উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশনের একজন ডিরেক্টর পদে। নারী উদ্যোক্তাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে ট্রেনিং ও অন্যান্য সাপোর্ট দেওয়ার জন্যে গড়ে তুলেছেন ‘উজ্জ্বলা সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ’। বর্তমানে তিনি কনসালটেন্ট হিসেবে প্রফেশনাল কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। একমাত্র ছেলেকে ঘিরে রয়েছে তাঁর স্বপ্ন আর কাজের পরিধি ঘিরে রয়েছে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা।
অনুষ্ঠানের গিফট স্পন্সরে ছিল রঁদেভু উইমেন্স উইংস সর্বজয়া, প্রাণ গ্রুপ, লিজান, রেড বিউটি সেলুন, ট্যান, এ জেড.এম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ফাতিহা প্রীতি, মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, অটোমেটিক সিউইং সিস্টেম বাংলাদেশ, লিটল স্টেপস কিডস ক্লাব, নৈসর্গিক, মন রাঙিয়ে, মিভস কিচেন, মিভস মিরর, তাঁতী আর তাঁত, চন্দ্রভান, শখের মেলা, ফ্যাশন জোন, নিতুস কিচেন, গাঁয়ের হাট, লিজাস হযবরল ও রাজিস বিফ কল্লোল গ্রুপ। র্যাফেল ড্র-এর গিফট স্পনসরে ছিল ট্রাভেলিজাম, কল্লোল গ্রুপ, লিটল এরাবিয়া, বেনে বউ, রেড বিউটি সেলুন ও সর্বজয়া।
অনুষ্ঠানটির আয়োজনে ছিল নুসরাত জাহান সিলভী, আফরোজা পারভীন, পারিসা ইসলাম খান, হালিমা হোসেন তন্দ্রা, আলিফ সানজিদা, মাকসুদা লিজা, ফাতিহা প্রীতি, মোহাম্মদ জাহিরুল ইসলাম, এল এন মেহেদী ইসলাম। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল রঁদেভু ৯৬৯৮ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কমিটি ও ৯৬৯৮ গ্ৰুপের প্যানেল সদস্যরা।
রঁদেভু ৯৬৯৮ ফাউন্ডেশনের উইমেন্স অ্যান্ড চিল্ড্রেন্স উইং বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজেদের ভূমিকা রেখে চলেছে সমাজে। এদের সব সদস্যই বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ও নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ব্যাচের বাইরেও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নারীদের কল্যাণে কাজ করার নানান উদ্যোগ নিচ্ছেন তাঁরা।
৯৬ সালে এসএসসি ও ৯৮ সালে এইচএসসি পাস করা প্রায় ১৮ হাজার সমবয়সী সদস্যদের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এসএসসি-৯৬ ও এইচএসসি-৯৮ কাজ করে চলেছে বিগত পাঁচ বছর ধরে। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা এর সদস্যরা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক নানা কর্মসূচিতে সরব থাকে সারাবছর। এদের প্রাতিষ্ঠানিক প্লাটফর্ম, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রঁদেভু ৯৬৯৮ ফাউন্ডেশনের সূচনা হয় ২০১৮ সালে। এই ফাউন্ডেশনের সদস্যরা প্রকাশনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, নারীর ক্ষমতায়ন, সংস্কৃতি, ক্রীড়াঙ্গনসহ নানান খাতে সফলভাবে কাজ করে চলেছে।