শিবির সন্দেহে রাবির চার শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে চার শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করে পুলিশে দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলের সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়।
এদিকে, আটককৃতরা বঙ্গবন্ধু হলে থাকাকালীন মতিহার হল ও মমতাজ উদ্দীন ভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
আটক ছাত্ররা হলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী লিটন, দ্বিতীয় বর্ষের মুহাইমিন, সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের নাসিম হাসান ও আরবি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরুখ। এদের মধ্যে লিটনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মারধরে তাঁর পা রক্তাক্ত হয়ে যায় এবং দুই হাতে গুরুতর জখম হয়।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কয়েকজন শিক্ষার্থী দল বেধেঁ মন্নুজান হলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ১৪ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে বঙ্গবন্ধু হলের ২৩৩ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে ঘণ্টাব্যাপী আটকে রেখে মারধর ও জিজ্ঞাসাবাদের পর চারজনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। প্রমাণ না পাওয়ায় বাকি নয়জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘শিবিরের ক্যাডাররা ক্যাম্পাসে শোডাউন দিচ্ছে জানতে পেরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অভিযান চালায়। এ সময় মন্নুজান হলের সামনে পৌঁছুলে কয়েকজনকে একসঙ্গে দেখে সন্দেহ হয়। এ সময় কয়েকজন আমাদের দেখে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পরে আমরা তাদের আটক করি। তাদের মধ্যে চারজন শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।’
তবে আটকের পর পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় লিটন ও মুহাইমিনের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, তারা বিকেলে ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসেছিলেন। এ সময় সন্দেহবশত তাদের আটক করা হয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিনা কারণে তাদের খুব মারধর করেছে। তারা কোনো ধরনের শিবির করেন না।
হল প্রাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আশরাফ উজ জামান বলেন, ‘আমি যখন হলে আসি তখন আটককৃতসহ সবাইকে হল থেকে বের হয়ে যেতে দেখি। বহিরাগতদের আটক করে হলে নিয়ে এসে এভাবে আটকে রাখা আমার পছন্দ নয়।’
এর আগেও হলে শিবির সন্দেহে শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে মারধরের ঘটনা ঘটলেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাধ্যক্ষ বলেন, এই বিষয়টি সরকার দেখবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কয়েকজনকে আটক করেছে। বিষয়টি শোনার পর আমি সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। চারজনকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে।’
জানতে চাইলে নগরীর মতিহার থানার ওসি শাহাদাৎ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চারজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। তাদেরকে এখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’