সংশোধিত ভুলে ৬৩ শিক্ষার্থীর ভোগান্তি
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের ‘ভুলের মাশুল’ গুনছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৬৩ শিক্ষার্থী। প্রথম ফলাফলে উত্তীর্ণ এবং পরে সংশোধিত ফলাফলে অনুত্তীর্ণ হওয়ায় বিশেষ বিবেচনায় তাঁরা পঞ্চম সমাবর্তনে যোগ দিতে পেরেছেন। তবে পাননি কোনো সনদ।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর চতুর্থ পর্বের চূড়ান্ত স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। যথারীতি তা সিন্ডিকেটে অনুমোদন হয়। এর প্রায় এক বছর পর তা সংশোধন হয়। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রকাশিত সংশোধিত ফলাফলে ৭০ জনের মধ্যে ৬৩ জনের ফলাফলে পরিবর্তন হয়। এই ফলেও ভুল ধরা পড়ে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন। এমন পরিস্থিতিতে তৃতীয়বারের মতো স্নাতক চূড়ান্ত পর্বের ফলাফল সংশোধনের প্রক্রিয়া বন্ধ করে প্রথম প্রকাশিত ফলাফল পুনর্বহালের দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রথম প্রকাশিত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তারা বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করেন। কয়েকজন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও পান। আবার অনেকে এর মধ্যে বিভিন্ন দেশে বৃত্তিও পান। তবে ফলাফল পরিবর্তিত হওয়ায় বৃত্তিপ্রাপ্তদের বৃত্তি বাতিল ও নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগ বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এসব শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ছাত্র রাসিক ইকবাল এনটিভিকে বলেন, ‘আমরা অনার্স (সম্মান) পরীক্ষা দিই ২০১৩ সালে, যেটার ফলাফল বের হয় ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। অনার্সের রেজাল্ট (ফল) বের হওয়ার পর আমরা বিভিন্ন জায়গায় অ্যাপ্লাই (আবেদন) করি। কিন্তু অনার্সের রেজাল্ট বের হওয়ার এক বছর পর ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখ আমাদের রেজাল্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। সেই রেজাল্ট দেখতে গিয়ে আমরা জানতে পারি, পরীক্ষা অফিসের ভুলের কারণে আমাদের রেজাল্টগুলোর মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন চলে আসছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে যখন আমাদের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে চাই, আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে বলা হচ্ছিল, ডিপার্টমেন্টের কোনো ভুল নেই এখানে। তারপর আমরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে যাই।’
রাসিক আরো বলেন, ‘মেইনলি (প্রধানত) ভুলটা তাদেরই ছিল। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে মার্কগুলো (নম্বর) যে টেব্যুলেশন (নম্বর যোগ করা) করা হয়, সে টেব্যুলেশনের সময় তাদের কিছু ভুলের কারণে প্রথমবার ভুল রেজাল্ট দিয়েছিল। এই রেজাল্ট সংক্রান্ত জটিলতার কারণে পরে আমরা ভিসি (উপাচার্য) ম্যামের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে এই জটিলতা নিরসন হবে। আমাদের আগের ফলাফলটিই বহাল থাকবে। এই সমস্যার জন্য একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দেন ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা। অন্যথায় আগামী ৮ এপ্রিল প্রশাসনিক অফিস ঘেরাও, মানববন্ধন এবং মানববন্ধন শেষে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষার সাময়িক সনদপত্রের প্রতিলিপিতে অগ্নিসংযোগের কর্মসূচি দেন তাঁরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আইয়ুব আলী বলেন, টাইপিংয়ের ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে ফলাফলে ভুল ধরা পড়লে তা যত সময় পরে হোক না কেন সংশোধন করা হবে।