ভর্তি জালিয়াতি : শিক্ষার্থীকে আটকে চাঁদা দাবির অভিযোগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হতে আসা এক শিক্ষার্থীকে আটক করে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে বলে ভর্তিচ্ছুর মা প্রক্টর কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে নগরীর মতিহার থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য একটি প্রক্সি সিন্ডিকেটের সঙ্গে চার লাখ টাকায় চুক্তি করেন ভর্তিচ্ছু ওই শিক্ষার্থী। চুক্তির পুরো টাকা পরিশোধ না করায় সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য মিলে তাকে আটক করে চাঁদা দাবি করেন।
অভিযোগ ওঠা সিন্ডিকেটের সদস্যরা হলেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী রাজু আহমদে, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মহিবুল মমিন সনেট এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকোয়ান সিদ্দিক ওরফে প্রাঙ্গণ। তাদের মধ্যে মহিবুল মমিন সনেটের বিরুদ্ধে এর আগেও ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। গত ৮ মার্চ নগরীর বোয়ালিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছিল।
এদিকে, জালিয়াতি করে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীর নাম আহসান হাবীন। গত ২৯ মে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের তৃতীয় শিফটের পরীক্ষায় তার হয়ে অন্যজন পরীক্ষা দেন এবং উত্তীর্ণ হন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত পপুলেশনস সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগে ভর্তি হতে আসেন আহসান হাবীন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আহসান প্রক্সির জন্য একটি গ্রুপের সঙ্গে চার লাখ টাকার চুক্তি করেন। এরমধ্যে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন তিনি। বাকি ৬০ হাজার টাকার জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের দিকে ডেকে নিয়ে যান ওই গ্রুপের সদস্যরা। কিন্তু, তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সেখান থেকে তাকে শের-ই-বাংলা হলে নিয়ে এসে আটক রাখা হয়। পরে তার বাবার কাছে ফোন দেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। পরে আরও তিন লাখ টাকা দাবি করেন তারা। ছেলের খোঁজ না পেয়ে তার মা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শরণাপন্ন হন। এরপর প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে তিনি প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে স্বীকার করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে নগরীর মতিহার থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
আটক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মা রেহেনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে যদি অপরাধ করে থাকে, তাহলে তার শাস্তি হোক। কিন্তু, যারা আমার ছেলেকে গুম করে আটকে রেখেছিল তাদেরকেও শাস্তি দিতে হবে।’
এদিকে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন শের-ই-বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সনেট ও প্রাঙ্গণ এ ঘটনার মূল কারিগর। ওই শিক্ষার্থী প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন। তাদের সঙ্গে চুক্তিতে কিছু টাকা বাকি থাকায় আমার পাশের রুমে নিয়ে আসে। ঘটনা জানার পরে আমি তাদের হল থেকে বের করে দেই। পরে প্রভোস্ট স্যার ফোন দিয়ে বলে তাদের ডেকে আনতে। যেহেতু আমি হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, এরপর তাদের ফোন দিয়ে প্রভোস্ট স্যারের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীকে প্রশাসনের কাছে তুলে দেই। আমি এ ঘটনায় জড়িত নই।’
অপর দুই অভিযুক্ত মহিবুল মমিন সনেট ও শাকোয়ান সিদ্দিক ওরফে প্রাঙ্গণের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আটকের ঘটনায় রাজু সম্পৃক্ত ছিল না। যেহেতু তিনি হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, ঘটনা জানার পর ওই শিক্ষার্থীকে প্রশাসনের কাছে তুলে দিতে গিয়েছিল।’
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, ‘ভর্তি জালিয়াতিতে জড়িত সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ বিষয়ে একটি মামলা করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘আটক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি মামলা করা হচ্ছে। তবে, তাকে আটক করে কে বা কারা চাঁদা দাবি করেছে, সেটা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’