রাত পোহালেই রাজশাহী ও সিলেট সিটির ভোট
রাত পোহালেই রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (এভিএমে) ভোটগ্রহণ হবে। গাজীপুর, খুলনা ও বরিশালের পর শেষ ধাপে আজ বুধবার এ দুটি সিটির ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবারও কেন্দ্রের ভোট পরিস্থিতি ঢাকায় বসে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখবে ইসি।
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দল ভোটে অংশ নিলেও নেই বিএনপি। বরিশালে এক মেয়র পদপ্রার্থীর ওপর হামলার পর ইতোমধ্যে সিলেট ও রাজশাহীর ভোট বর্জন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে না থাকলেও কমিশন বরাবরের মতো এবারও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সব মিলিয়ে ইসির কাছে এ ভোট ভালোভাবে সম্পন্ন করা বেশ চ্যালেঞ্জের কাজ।
ভোটের আগে পুরো সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকাকে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার ফয়সাল কাদের। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে সিলেটের ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। নিরাপত্তায় কাজ করবে ১০ প্লাটুন বিজিবি। থাকবে র্যাব ও পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স। প্রতিটি কেন্দ্রে আনসার সদস্যের পাশাপাশি থাকবে পুলিশ। এ ছাড়া ৪২টি ওয়ার্ডের জন্য ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যেকোনো অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচারকাজ সম্পন্নের জন্য মাঠে রয়েছেন ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।’
১৯০টি ভোটকেন্দ্রের বাইরে থাকবে দুটি করে সিসি ক্যামেরা। ক্যামেরা থাকছে এক হাজার ৩৬৭টি ভোটকক্ষেও। সব মিলিয়ে মোট সিসি ক্যামেরা থাকছে এক হাজার ৭৪৭টি। এসব তদারকি করা হবে ইসির প্রধান কার্যালয় থেকে।
সিলেট সিটির এবার মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৫৪ হাজার ৩৬০ এবং নারী দুই লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৭ জন। মেয়র পদে আট জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭৩ এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৮৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার অভিযোগে সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে ইসি।
নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. ইলিয়াস শরিফ। তিনি জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন করতে নগরীতে কাজ করছে প্রায় দুই হাজার ৬০০ পুলিশ সদস্য। মাঠে রয়েছেন ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৪২টি ওয়ার্ডে ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে রয়েছেন চারজন প্রার্থী। যদিও গত ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ এনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র পদপ্রার্থী মাওলানা মুরশিদ আলম নির্বাচন বর্জন করেছেন। অপর তিন মেয়র পদপ্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সদ্য সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপন এবং জাকের পার্টির অ্যাডভোকেট লতিফ আনোয়ার।
নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছেন ১১২ জন। এর মধ্যে ২০ নম্বর ওয়ার্ডে একক প্রার্থী থাকায় সেখানে এই পদে নির্বাচন হচ্ছে না। অপর ২৯টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১১ জন। এ ছাড়া সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ৪৬ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন সুলতানা আহমেদ সাগরিকা নামে একজন তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী।
সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, এবারের নির্বাচনে নগরীর ১৫৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮টিই অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৫৫টি কেন্দ্রের এক হাজার ১৫৩টি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। ভোট পর্যবেক্ষণ করতে বসানো হয়েছে এক হাজার ৫৬০টি সিসি ক্যামেরা।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আনিসুর রহমান জানান, সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে তিন হাজার ৫১৪ জন পুলিশ সদস্য ও এক হাজার ৮৬০ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে র্যাবের ১৫টি দল ও ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। পাশাপাশি ৩০টি ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকবেন ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ লাইন মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দিকনির্দেশনা প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার রয়েছে তিন লাখ ৫১ হাজার ৮৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন, নারী ভোটার এক লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন মাত্র ছয়জন। তারা ইভিএমের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
রিটার্নিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ১৫৫টি কেন্দ্রের এক হাজার ১৫৩টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রতিটি বুথেই সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রের বাইরেও সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। মোট এক হাজার ৫৬০টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকা থেকে ইসি ভোট পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করবে। কোথাও কোনো প্রকার অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোটগ্রহণ চলাকালে কোনো কেন্দ্রে কেউ গোলযোগ সৃষ্টি বা সহিংসতার চেষ্টা করলে তাকে কঠোর হাতে দমন করা হবে।