বিজয়ী প্রার্থীদের গেজেট-শপথ হতে পারে যেদিন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ২৯৯ আসনের মধ্যে বেসরকারিভাবে ২৯৮ জন বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে, অর্থাৎ সরকারিভাবে গেজেট করে ফলাফল ঘোষণা করার পালা। তারপর শপথগ্রহণ করবেন বিজয়ীরা।
যদিও এখন পর্যন্ত গেজেট, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ ঠিক কবে, তা জানায়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে, আজ সোমবার বিকেলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের সঙ্গে কথা হলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সব অনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ সোমবার রিটার্নিং কর্মকর্তারা সব ফলাফল আমাদের কাছে পাঠাবেন। কোনোটা বাকি থাকলে আগামীকাল পাঠাবেন।’
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘আমরা হয়তো আগামীকালের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয়ে (বিজি প্রেস) নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা পাঠিয়ে দেব। ১০ জানুয়ারি হয়তো গেজেট হয়ে যাবে। গেজেট হলেই আপনারা জানতে পারবেন। তবে, কখন গেজেট হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’
অতিরিক্ত সচিব যোগ করেন, ‘আইন অনুযায়ী গেজেট হয়ে যাওয়ার ৭২ ঘণ্টা, অর্থাৎ তিন দিনের মধ্যেই শপথ নিতে হবে প্রার্থীদের। তার মানে, ১০ জানুয়ারি গেজেট হলে ১৩ জানুয়ারির মধ্যে শপথ নিতে হবে। তবে, ২৯ জানুয়ারির আগে সংসদ অধিবেশনে বসতে পারবে না। কারণ, একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ৩০ জানুয়ারি।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় গতকাল রোববার (৭ জানুয়ারি)। নওগাঁ-২ আসনের একজন প্রার্থীর মৃত্যুতে সেখানে পরে ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট হবে। তবে, গতকাল নির্বাচন কমিশন থেকে ২৯৮ আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। আর ময়মনসিংহ-৩ আসনের একটি কেন্দ্রের ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের কারণে ওই আসনের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত রাখা হয়েছে। কারণ, ওই একটি কেন্দ্রের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে, কোন প্রার্থী জয়ী হবেন।
এ ব্যাপারে আজ সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ময়মনসিংহ-৩ আসনের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। এ আসনে ৫৩ হাজার ১৯৬ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন একজন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ৫২ হাজার ২১১ ভোট পান। ভোটের ব্যবধান ৯৮৫। স্থগিত কেন্দ্রে ভোট রয়েছে তিন হাজার ৯৩২টি। ফলে, ওই একটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ করা হবে ১৩ জানুয়ারি।
অন্যদিকে, ঢাকা-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী হারুনর রশীদ মুন্নাকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান মোল্লা সজল বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ৫০ হাজার ৬৩১ ভোট পেয়েছেন। আর নৌকার প্রার্থী হারুনর রশীদ (মুন্না) পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩৩৪ ভোট। ফলে, ২৯৭ ভোটে জয় পেয়েছেন সজল। তবে, হারুনর রশীদ মুন্না দাবি করেছেন, তিনি ৬১৩ ভোটে জিতেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আমি বিজয়ী হয়েছি। আমার আসনে ভোট কারচুপি হয়নি। তবে, গণনায় ভুল হয়েছে। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ভুল করেছে। আমি ৬১৩ ভোটে জিতেছি। কিন্তু, ২৯৭ ভোটে হার দেখানো হয়েছে। ১৮৭টি কেন্দ্রের ভোট পুনঃগণনার দাবি জানাই আমি।’
এ বিষয়ে আজ রোববার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন, ভোটে কারচুপি হয়েছে, ফলাফল প্রভাবিত হয়েছে; তাহলে তার জন্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টে বিভাগ উন্মুক্ত থাকবে। গেজেট প্রকাশ প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে নালিশ দায়ের করতে পারবেন।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ২৯৮ আসনে ভোটের হার ৪১ দশমিক আট শতাংশ। নির্বাচন কমিশন দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৮ বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এসব আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২২৩টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ এবং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬১টি আসনে বিজয়ী হয়েছেন।
বিজয়ীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির দুই প্রার্থী নৌকা প্রতীকে জিতেছেন। সে সময় সাংবাদিকরা সিইসির কাছে প্রশ্ন করেন, আমাদের কাছে হিসাব রয়েছে, আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে ২২২ আসনে। তখন কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, দল অনুযায়ী আসনের বিষয়টি ভালোভাবে দেখে সঠিক পরিসংখ্যান দেওয়া হবে।