গরম রক্ত গরম
ছোটবেলায় সাধারণ বিজ্ঞান বা সাধারণ জ্ঞানের বই থেকেও মোটামুটি সবারই জানার কথা, মাছ হলো শীতল রক্তের প্রাণী। সারাটা জীবন পানিতে আবাস, রক্ত ঠান্ডা হবে না তো গরম হবে নাকি! এমনভাবেও অনেকেই ভাবতেন হয়তো! এই হিসাব এখন করতে হবে নতুন করে। এমন এক মাছের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেটি উষ্ণ রক্তের অধিকারী।
গভীর সমুদ্রের এই মাছের নাম ‘ওপাহ’। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত একটি জার্নালে এই মাছের আবিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে। ভোকাটিভির ফিচার থেকে জানা গেল, ওপাহ পুরোপুরিভাবে উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট, একে ‘মুনফিশ’ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।
উষ্ণ রক্তের অধিকারী হওয়ার কারণে অন্যান্য প্রাণী উচ্চমাত্রায় শারীরিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারে, যা তাদের জীবনধারণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ কাজে দেয়। মাছের এই সুবিধা নেই, কারণ মাছ শীতল রক্তের প্রাণী। শরীরের তাপমাত্রা কম হওয়ার কারণে কোনো লক্ষ্যবস্তুকে ধাওয়া করে শিকারের বদলে ফাঁদ পেতে শিকার করাই তাদের কাজ হয়ে থাকে, কারণ শিকারের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রুতগতি এই নিম্ন তাপমাত্রার জন্যই নেই তাদের।
সব মাছের ক্ষেত্রেই ঘটনাটা প্রযোজ্য, তবে ওপাহর জন্য নয়—এমনই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এটিকে তারা ‘নিয়মের ব্যতিক্রম’ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
নিক ওয়েগনার নামের একজন মৎস্যবিদ আবিষ্কার করেছেন ওপাহর বিষয়-আশয়। বছরখানেক ধরে এই মাছটির দিকে কড়া মনোযোগ রেখেছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি লক্ষ করেন, ওপাহর উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট নালি রয়েছে। এর মাধ্যমে ওপাহ খুব সহজেই শরীরের তাপ উচ্চমাত্রায় নিয়ে যেতে পারে এবং যেকোনো কিছুকে তাড়া করতে পারে। সে সঙ্গে এটি এক হাজার ৩০০ ফুট গভীরতায়ও এই তাপব্যবস্থাকে ধরে রাখতে পারে।
কিছু কিছু টুনা ও হাঙ্গর প্রজাতিতেও উষ্ণ শারীরিক তাপমাত্রার বিষয়টি দেখা যায়, তবে সেটা আংশিকভাবে। ওপাহর ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই অন্য রকম। ওয়েগনার বলেন, ‘ওপাহ হচ্ছে আমাদের জানা প্রথম মাছ, যেটি পুরো শরীরেই উষ্ণ রক্ত প্রবাহিত করতে সক্ষম।’