বাঘের সঙ্গে বসবাস!
মানুষ শখ করে কত কিছুই না পোষে। কুকুর, বিড়াল থেকে শুরু করে অনেকে সাপ পর্যন্ত পোষে। কিন্তু তাই বলে পোষা প্রাণী হিসেবে বাঘকে বেছে নেওয়াটা আর যা-ই হোক, মোটেই স্বাভাবিক কোনো ঘটনা না। চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো এই কাণ্ডই করেছে ব্রাজিলের একটি পরিবার।
একটি বা দুটি নয়, সাত-সাতটি প্রমাণ সাইজের বাঘের সঙ্গে বসবাস করছেন তাঁরা। ব্রিটিশ দৈনিক দি ইনডিপেনডেন্ট-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই অদ্ভুত পোষ্যদের কথা।
ঘটনার শুরুটা হয়েছিল ২০০৫ সালে। দক্ষিণ ব্রাজিলের মারিঙ্গা শহরের আরিয়াস বোর্হেস ছিলেন পশু-দরদি। সার্কাস থেকে মৃতপ্রায় দুটি বাঘের ছানা উদ্ধার করে নিজের বাড়িতে এনেছিলেন তিনি। এভাবেই শুরু।
একে একে নানা সার্কাস বা চিড়িয়াখানা থেকে উদ্ধার করেন আরো পাঁচটি বাঘ। নিজের বাসায় গড়ে তোলেন তাদের থাকার মতো পরিবেশ। এভাবে পুরোদস্তুর উদ্ধারকর্তা বনে গিয়ে সাতটি বাঘ নিয়ে বসবাস করছেন এখন। নিজের পরিবার নিয়ে তাদের সঙ্গে এক বাড়িতেই থাকেন, একসঙ্গে সাঁতার কাটেন। বাঘগুলো দিব্যি সোফায় শুয়ে ঘুম দেয়, এমনকি খাবারও তারা একসঙ্গেই খান।
বোর্হেসের পরিবারের কেউ কিন্তু বাঘগুলোকে একেবারেই ভয় পায় না। এমনকি নিজের দুই বছর বয়সী নাতনিকেও নিঃশঙ্কচিত্তে বোর্হেস চড়তে দেন বাঘের পিঠে।
বোর্হেসের ভাষ্যমতে, ‘সব পশুই আদর ভালোবাসা বোঝে। আপনি যদি তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন, তবে তারাও আপনার সঙ্গে তেমন ব্যবহারই করবে। আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউই বাঘগুলোর জন্য বিন্দুমাত্র বিপদে পড়িনি।’
আর এই তত্ত্বের বশবর্তী হয়েই কি না সম্প্রতি দুটি সিংহও পুষতে আরম্ভ করেছেন তিনি। অবশ্য স্থানীয় প্রশাসন বা প্রাণী অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলো তাঁকে প্রতিনিয়তই চাপে রাখছে। ‘বন্য প্রাণীদের বনেই রাখা উচিত’—এ দাবি তাদের।
বোর্হেস অবশ্য তাদের থোড়াই কেয়ার করেন। এমনকি আদরের প্রাণীগুলোকে কাছে রাখার জন্য আইনি ঝামেলাও পোহাতে তিনি রাজি। অবশ্য এটাও মনে রাখা উচিত, বন্য প্রাণীকে যতই আদর-যত্নে রাখা হোক, বিপদের আশঙ্কা মাত্র তারা মস্তিষ্কের পরিবর্তে প্রবৃত্তি অনুযায়ী ব্যবহার করে ফেলে।
আর এর ফলে বহু প্রশিক্ষণের পরও পোষা প্রাণীর হাতেই মৃত্যু ঘটতে পারে। বিখ্যাত সার্কাস ট্রেনার রয় হর্ন মারা গিয়েছিলেন নিজেরই সাত বছরের পোষা সাদা বাঘের হাতে। কাজেই বোর্হেসের নমুনাকে অনুকরণীয় হিসেবে না নিলেই মঙ্গল।